জীবনযুদ্ধ থেমে নেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গণি মিয়ার!
সেপ্টেম্বর ২৩ ২০২৫, ১৬:১২
চোখে আলো নেই ১৮ বছর। তবুও হাত থেমে নেই আব্দুল গণি মিয়ার। বয়সের ভার, অন্ধত্ব কিংবা অসুস্থ স্ত্রী, কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
৬৭ বছরের গণি মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের বুড়িচালা এলাকায়। সংসারে সঙ্গী ৬২ বছরের হাউসি বেগম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড হয়ে ঘরেই শয্যাশায়ী। সংসারের বোঝা তাই একাই বইতে হচ্ছে গণি মিয়াকে।
একসময় তার চোখ ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝাপসা হতে থাকে দৃষ্টি। অবশেষে ১৮ বছর আগে তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু চোখ অন্ধ হলেও থেমে যাননি তিনি।
অন্ধ হয়েও কারো কাছে হাত পাততে (ভিক্ষা করতে) চান না গণি মিয়া। বন-জঙ্গল থেকে বাঁশ কুড়িয়ে এনে ইশারায় কেটে ফেলেন, চিড়ে তৈরি করেন কুলা, টেপারি আর ঝুড়ির মতো হস্তশিল্প। প্রতিদিন উপজেলার আলিশার বাজারে বসে এগুলো বানান ও বিক্রি করেন। কাজ করার সময় ধর্মীয় গান বা গজল গেয়ে যেন ভুলে থাকার চেষ্টা করেন নিজের কষ্ট।
দিন শেষে হাতে আসে মাত্র ৮০-৯০ টাকা। সেটাই তার অসুস্থ স্ত্রী আর নিজের ভরসা। সংসারে নেই আর কোনো উপার্জনক্ষম মানুষ।
গণি মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। ভেবেছিলেন বিদেশে থাকা ছেলেদের কারণে বার্ধক্যের দিনগুলো একটু স্বস্তিতে কাটবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ছোট ছেলের ঘরে আশ্রয় মিললেও আর্থিক সহায়তা নেই। দুজনের কেউই নিয়মিত খোঁজ নেন না, পাঠান না প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা। ফলে দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে, বাস্তবতা মেনে নিয়ে দিন কাটছে গণি মিয়ার দম্পত্তি।
প্রতিবেশী জাকির হোসেন বলেন, ‘গণি ভাই খুব পরিশ্রমী মানুষ। চোখে দেখতে পান না, তবুও কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি। বাঁশ কেটে কুলা-ঝুড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। স্ত্রী অসুস্থ, সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি সাহায্য বা কোনো ভালো মানুষের সহায়তা পেলে ওনাদের জীবনে একটু স্বস্তি আসতো।’ এলাকাবাসী মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়ালেও তা যথেষ্ট নয়। স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারি সহযোগিতা বা কোনো বিত্তবান মানুষের সহায়তা পেলে জীবনের শেষ বয়সে অন্তত শান্তি পেতেন এই দৃষ্টিহীন মানুষ ও তার অসুস্থ স্ত্রী।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ‘গণি মিয়াকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। অন্ধ হয়েও তিনি বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।’
অন্ধত্বের অন্ধকারে থেকেও হাল ছাড়েননি আব্দুল গণি মিয়া। তার জীবনের প্রতিটি দিন যেন একেকটি শিক্ষা। কষ্ট যতই হোক, শ্রম আর সততাই মানুষকে টিকিয়ে রাখে।







































