রোগীদের স্বজন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রোগী আসলে সবুজ রোগীর ক্ষত স্থানে সেলাই-ব্যান্ডিজ এমনকি ইনজেকশন পুশ করছেন। এক পর্যায়ে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবুজ জরুরি বিভাগের দায়িত্বেই থাকেন।
স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, একজন মালি কাম হারবাল সহকারীর কাজ হাসপাতাল চত্বরে হারবাল সংশ্লিষ্ট গাছের বাগান পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং পাশাপাশি হাসপাতালের হারবাল চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করা। কিন্তু হাসপাতালে কোনো হারবাল চিকিৎসক নেই এবং চত্বরে কোনো বাগানও নেই।
রাসেদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, সম্প্রতি তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের শরীরের মাইলোমা অপারেশন হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্ত্রী ড্রেসিং করার জন্য স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গেলে জরুরি বিভাগের মো. সবুজ ড্রেসিং করেন। কয়েক দিন পর অপারেশন স্থানে ইনফেকশন হলে চিকিৎসক জানান, ড্রেসিং ভালোভাবে না করার কারণে ইনফেকশন হয়েছে। রাসেদুল ইসলাম বলেন, মো. সবুজের অজ্ঞতার কারণেই তার স্ত্রীর এমনটি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি সংস্থার চিকিৎসক, যিনি নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন, তিনি বলেন, একজন মালি কীভাবে জরুরি বিভাগে রোগীর সেলাই-ব্যান্ডিজ করেন, এটা আমার বোধগম্য হয় না।
এ বিষয়ে কী তার প্রশিক্ষণ আছে, একজন কাটা-ছেঁড়া ক্ষত নিয়ে আসা রোগীর কোনো ধরনের সেফটি নিয়ে কাজ করতে হয়, সেটা যদি ওই ব্যক্তির প্রশিক্ষণ না থাকে তাহলে ওই রোগীর জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারবাল সহকারী মালি কাম মো. সবুজ বলেন, জরুরি বিভাগে আমার কোনো ডিউটি নেই। কারণ আমার কাজ আলাদা (ভিন্ন)। আমাদের এখানে ইউনানি আর্যুবেদি চিকিৎসক নেই। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে আমাকে যেখানে ইচ্ছা খাটাতে পারে। লোক সংকটের কারণে আমাকে জরুরি বিভাগে ডিউটি দিয়েছে।
রোগীর স্বজনদের কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি (সবুজ) বলেন, কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা নেই। রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে যা দেয়, তাই নেই। জোরের কিছু নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বলেন, আমার এখানে জরুরি বিভাগে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাক্তার নেই। যে পরিমাণ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকে, তাও নেই। কখনো কখনো এই সংকটের কারণে তাকে (মালি সবুজ) দিয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে কাজ করানো হয়।
পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, পটুয়াখালীতে ডাক্তারের ব্যাপক সংকট চলছে। বাউফলে মাত্র তিনজন ডাক্তার আছেন। ডাক্তার সংকটের কারণে হয়তো এমনটি হয়েছে। আসলে উচিত নয়। তবে ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ হলে এ ধরনের সংকট কেটে যাবে।