শেষ মুহুর্তেও বরিশালে কামারপাড়ায় ব্যস্ততা
জুন ০৪ ২০২৫, ১৭:২০
আমার বরিশাল ডেস্ক ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ-উল আযহা। ঈদের নামাজের পর পশু কোরবানির মধ্য দিয়েই শুরু হয় এই ঈদের তাৎপর্য। অধিকাংশ বিত্তবান মুসলিম পরিবার পশু কোরবানি দেওয়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই থাকে কোরবানির ব্যস্ততা। ঈদের দিন সকালে মুসলিম পরিবারে পশু কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো, হাড় ও মাংস কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই।
কোরবানির কাজে ব্যবহৃত দা, ছেনি, ছুরি, চাপাতি সারা বছর তেমন ব্যবহার না হলেও ঈদের দিনে এসব যন্ত্রের ব্যবহার খুব বেশি প্রয়োজন। তাই তো কোরবানিকে সামনে রেখে বরিশাল শহর থেকে শুরু করে জেলার প্রতিটি উপজেলা হাট-বাজারে থাকা কামারপাড়ায় ভিড় বাড়তে শুরু করছেন মুসল্লিদের।
বুধবার ( ৪ জুন) সরেজমিনে বরিশাল নগরীর হাটখোলা ও চাঁদমারী এলাকার কামার পল্লীসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে- প্রতিটি কামার দোকানে দা, ছুড়ি, চাপাতি তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন কামাররা।
লোহার টুকরা আগুনে পুড়িয়ে সেগুলো পিটিয়ে দা, ছেনিসহ বিভিন্ন লোহার সরঞ্জাম তৈরির টুং টাং শব্দে মুখর কামার পল্লী। কামার পল্লীতে কেউ চুলায় ভাপি (বাতাস দেওয়ার বিশেষ যন্ত্র) টানছে, কেউ লোহা পিটছে, কেউবা শান দিচ্ছে। অনেক কামার দোকানে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে। কামার পাড়ার টুং টাং শব্দ সকাল থেকে শুরু করে চলে গভীর রাত অবধি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক কামার দোকান রয়েছে। ওইসব দোকানগুলোতে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। কোরবানি এলেই প্রতিটি দোকানে বাড়ে তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ঈদের অন্তত ১৫-২০ দিন আগ থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চালায় শ্রমিক কারিগররা।
মৌসুম শুরুর দিকে নতুন সরঞ্জাম বেশি তৈরি করলেও ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে গ্রাহকদের পুরাতন দা, ছেনি, ছুরি ও চাপাতির শান দিতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। দা ও চাপাতি শান দিতে চাঁদমারী কামারের দোকানে আসা ইমরান জানান, সারা বছর সংসারে দা ব্যবহার হলেও ছুরি ও চাপাতি গুলো কোরবানির পর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে। এক বছর সেগুলো ব্যবহার না করায় মরিচায় জং ধরে থাকে। তাই কোরবানি আসলেই দা, ছুরি ও চাপাতির শান দিতে নিয়ে আসি। কারন হলো কোরবানীর দিন মাংস কাটার কাজে ব্যবহার হবে তাই।
দা, ছুরি ও চাপাতিতে শান দিতে টাকা বেশি নেয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘অন্যান্য সময় ২০ টাকায় দা শান দেওয়া যায় কিন্তু কোরবানির সময় ৩০-৪০ টাকার নিচে শান দেওয়া যায়না। টাকা বেশি দিয়েও যখন-তখন পাওয়া যায় না, ২/৩ দিন আগে এসে দিয়ে যেতে হয়।’ নিতে হয় কমপক্ষে ৩ দিন পরে। চাপাতি কিনতে আসে ক্রেতা সোহেল শিকদার বলেন, ‘গত কোরবানীর ঈদেও চাপাতি কিনেছিলাম। কিন্তু একদিন ব্যবহারের পর সেগুলো কোথায় আছে খুঁজেও পাই না। ঘরে একটি পেয়েছি তাও মাটিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এ বছর আবারও চাপাতি কিনতে এসেছি। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর দামও অনেক বেশি।’
বরিশাল নগরীর কালিজিয়া কামার পল্লীসহ কর্মকার বলেন, ‘লোহার দাম বেশি, কয়লারও দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বছরের ১০ মাসই তেমন কোন কাজ থাকে না। ঈদ ও কোরবানির সময় কাজের চাপ একটু বেশি থাকার কারনে অতিরিক্ত শ্রমিক বেশি টাকা বেতনে কাজে লাগাতে হয়।
তাই কোরবানির সময় অন্যান্য সময়ের তুলনায় লোহার সরঞ্জামের দাম একটু বেশি থাকে।’ শান দেওয়ার টাকা বেশি নেওয়া সম্পর্কে তিনি জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন তৈরি করেই তো সময় পাই না। পুরাতন জিনিসে শান দিব কখন? রাত জেগে কাজ করে শ্রমিকরা তাই এই মৌসুমে শান দেওয়ার টাকা বেশি নেন সব কারিগররা।’







































