অপরিপক্ব ফলে সয়লাব বরিশালের বাজার

মে ১৯ ২০২৫, ১৬:৪৬

0-4608x2602-0-0#

আরিফ হোসেন ॥ জ্যৈষ্ঠ মাসে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি মিষ্টি ফল পাওয়া যায়। তাই জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধু মাস বলা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে গাছে ঝুলছে অপরিপক্ব আম, কাঁঠাল, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল। অপরিপক্ব হওয়ার আগেই অপরিপক্ব মৌসুমি ফলে ভরে গেছে বরিশালের বাজার। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় আগেভাগেই বাজারজাত করছে অপরিপক্ব ফল।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতোমধ্যে বরিশালের বাজারে এসেছে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল। প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের দাবি, ফলের মৌসুমেও ভোক্তা অধিকারের বাজার মনিটরিং চালানো দরকার। আর চিকিৎসকদের মতে, এসব অপরিপক্ব ফল খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ।

* বাজার মনিটরিং সহ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের দাবি সকলের
* ফলে বিষযুক্ত কেমিক্যাল আছে কিনা তা টেস্ট করার নেই কোন যন্ত্র বা কিড
* চিকিৎসকরা বলছে কেমিক্যাল ফল স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি
* সংশ্লিষ্ট দপ্তর অন্য দপ্তরের উপর দায় চাপাচ্ছে

এদিকে বরিশালের বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে অপরিপক্ব ফল বিক্রি করলেও সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি নেই বলে অভিযোগ সাধারন মানুষের। বরিশাল জেলা জুড়ে প্রতিদিনই আসছে আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের ফল। কোনোটার রঙ গাঢ় হলুদ, কোনোটা আবার টকটকে লাল। বিক্রির জন্য ফলগুলোকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাজারের দোকানে দোকানে। এই ফল দেখে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা প্রতিদিন কিনে বাড়ি ফিরছেন হাসিমুখে। কিন্তু কাটার পর মুখে দিতেই বোঝা যায় রসালো ফলটি অপরিপক্ক, কৃত্রিমভাবে পাকানো।

শুধু আম নয়, মৌসুমি প্রায় সব অপরিপক্ক ফলই এখন বিষে ভরা। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপেসহ বেশিরভাগ ফলেই মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। বিশেষ করে বাজারে আসতে শুরু করেছে সাতক্ষীরার আম হিমসাগর আম। খাওয়ার উপযোগী না হলেও দৃষ্টিনন্দন রঙের মোহে প্রতিদিন ক্রেতারা যেন বিষ কিনে নিয়ে যান প্রিয়জনের জন্য। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোর্ড ফলের আড়ত গুলো ঘুরে দেখা যায়, রঙ-বেরঙের ফল দেখে মনে হয় এ এক ফলের রাজ্য। দোকানের টুকরিতে সাজানো টসটসে লাল রঙের আম ধরলেই হাতে উঠে আসে সাদা রংয়ের পাউডার।

কেমিক্যালসহ বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল দিয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে টনকে টন আম সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এই আম প্রতিদিন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে চলে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানোর কাজটি এমন কৌশলে করেন যেন ক্রেতারা বুঝতে না পারেন। রাসায়নিক মেশানোর পর একদিনের মধ্যে ফল পেকে যায় বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।

ফল ব্যবসায়ী বাবুল জানান, স্বাভাবিকভাবে ফল পাকতে দিলে বিক্রির জন্য অপেক্ষমান সময়ে অর্ধেকের বেশি ফল নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা অবস্থায় কিনে আনা ফল পাকানোর জন্য কৃত্রিম পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। এই পদ্ধতি দেশের সব জায়গাই আছে।

ফলপট্টির এক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান, মৌসুমি ফল বাজারে এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। এখন যে ফল বিক্রি করছি প্রায় সব আমে কেমিক্যাল মেশানো হয়। ক্রেতা ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে এভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে।

নগরীর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল শিকদার বলেন, আমের স্বাদ ও লোভনীয় ঘ্রাণ মুগ্ধ করে সবাইকে। বাজারে ফলের দোকানে, রাস্তার ধারে হকারের ডালায় সাজানো থাকে আম। কিন্তু এই আম খেতে গেলেই মানুষের মনে একটা আতঙ্ক কাজ করে ‘রাসায়নিকে পাকানো নয় তো!’ বাস্তবতা হচ্ছে, অধিক মুনাফার আশায় গাছ থেকে অপরিপক্ব আম পেড়ে কার্বাইড বা ওই জাতীয় রাসায়নিক প্রয়োগ করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে আম পেকে সুন্দর রঙ ধারণ করলেও এই আম খেতে মোটেও সুস্বাদু নয়।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ইনজেকশন দেওয়া হয়। আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে এটি অ্যাসিটিলিন নামক গ্যাস ছড়ায়। এতে আম দ্রুত পাকে। এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। ত্বকের জ্বালা, শ্বাসকষ্ট এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো দেখা দেয়। আবার ফল ব্যবসায়ীরাও আম ও অন্যন্য ফল পাকাতে ‘ইথিলিন ট্রিটমেন্ট’ ব্যবহার করেন। এ সময় ফলকে ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আনা হয়। আমের মাধ্যমে এসব রাসায়নিক উপাদান শরীরে গেলে ত্বকের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, লিভার ও কিডনির সমস্যা, মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক রোগ হওয়র ঝুঁকি বাড়ে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল দিয়ে ফল পাকাচ্ছেÑ বিষয়টি শুনে যাচ্ছি। তবে ফলে কেমিক্যাল দেওয়া হচ্ছে কিনা এটা পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের। তবে শিগগিরই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে অভিযানে নামবে।

মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল বিষযুক্ত কেমিক্যাল দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানালেন বরিশাল বিভাগীয় বিএসটিআই অফিসের উপপরিচালক (মেট্রোলজি) ও অফিস প্রধান মোঃ আব্দুল হান্নান। তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাই কেমিক্যালযুক্ত আম বাজারে নেই বলেই চলে। তবে ফলে বিষযুক্ত কেমিক্যাল দেওয়া হচ্ছে কিনা এটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এটা দেখার দায়িত্ব হলো কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।

অন্যদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বরিশাল কার্যলয়ের উপ-পরিচালক এস এম মাহাবুব আলম বলেন, আমাদের দপ্তরে ফল টেস্ট করার মত কোন যন্ত্র অথবা দক্ষলোক নেই। আমাদের কোন কৃষিবিদ অথবা প্রশাসনিক ক্ষমতাও নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যারে সাথে আলাপ করবো। এটা দেখার দায়িত্ব হলো বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের।

বিষয়টি জানতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বরিশাল জেলা কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য অফিসার গোলাম রাব্বি বলেন, আমাদের দপ্তরে ফল টেস্ট করার মত কোন যন্ত্র বা কীড নেই। তাই আমাদের ফলের ক্ষেত্রে সতর্ক করা ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তবে সাধারন মানুষের প্রশ্ন ফলে বিষযুক্ত কেমিক্যাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না।

না তারা ফলে পরিবর্তে মানুষকে বিষ খাওয়াবে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও