স্থায়ী হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

নভেম্বর ২০ ২০২২, ১৩:১৭

ডেস্ক প্রতিবেদক: মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বর দেশে স্থায়ী হতে চলেছে। গত ২২ বছরেও পুরোনো রোগটি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। উল্টো শক্তভাবেই শিকড় গেড়েছে। ফলে শহুরে ডেঙ্গু এখন গ্রামেও সমান দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ২২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় দুই যুগে এ মৃত্যু সর্বোচ্চ। আর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক ব্যক্তিকে।

চলতি মাসের শেষ দিকে শনাক্ত-মৃত্যু কমতে শুরু করলেও আগামীতে সারা বছর হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী ভিড় করার আশঙ্কা করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার আমার সংবাদকে বলেন, নভেম্বরের পর থেকে এডিস মশার ঘনত্ব কমে এলেও এখন থেকে আমরা একটি বিষয় দেখব সারা বছরই দেশে ডেঙ্গু রোগী থাকবে। কারণ ডেঙ্গু এখন আমাদের দেশে স্থায়ী হতে চলেছে। আর যখন ডেঙ্গু মৌসুম আসবে (জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর অক্টোবর) তখন অবস্থা খারাপ হবে। তবে আমরা যদি সারা বছর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখি তাহলে ডেঙ্গুকে সঠিকভাবে ম্যানেজমেন্ট করতে পারব। নয়তো জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডেঙ্গু ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে।

এদিকে ডেঙ্গুতে মৃত ২২৬ জনের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। বাকি ৯১ জনের মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, শুরুতে ডেঙ্গু ঢাকায় থাকলেও এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি। রাজধানীর বাইরে অন্তত প্রায় ১৫ কোটি মানুষের বসবাস। আশঙ্কার বিষয় সামনের দিনে প্রান্তিকে ডেঙ্গু ভয়াবহভাবে ছড়ালে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। সারা বছর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। প্রত্যেক পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনে কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করতে হবে। তাদের মাধ্যমেই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

দুই যুগের ডেঙ্গু চিত্র : ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এরপর দীর্ঘদিন ডেঙ্গু ছিল নিয়ন্ত্রণে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এক লাখ এক হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন।

২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। গত বছর ডেঙ্গুতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মোট মৃতের মধ্যে চলতি মাসেই সবচেয়ে বেশি মারা গেছে। এ বছর এত রোগী মারা যাওয়ার কারণ কী? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, বছরের শুরু থেকে মে মাস থেকে যেহেতু ডেঙ্গু শুরু হয়েছিল। তখন আমরা কমাতে পারিনি। আবার অন্যান্য বছরের মতো অক্টোবরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এজন্য এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে।

দেশের সর্বশেষ অবস্থা : এদিকে গতকাল শনিবার  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩২০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ২৩৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন। অধিদপ্তরের তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৭৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে এক হাজার ৫৫২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ৫২ হাজার ১৬১ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৫১ জন; ঢাকার বাইরে ১৮ হাজার ৪১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল মৃত্যু হওয়া ছয়জনকে নিয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২৬ জনের। মাস হিসাবে আক্রান্ত ও মৃৃৃৃত্যুর তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ২০ জন করে, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, জুনে ৭৩৭ জন, জুলাইয়ে ১৫৭১ জন, আগস্টে ৩৫২১ জন এবং সেপ্টেম্বরের ৯৯১১ জন এবং অক্টোবরের ২১৯৩২ জন এবং নভেম্বরের ১৯ দিনে ১৪১৩৭ রোগী রোগী ভর্তি হয়েছে। এদিকে চলতি বছরের প্রথম মৃত্যু হয়েছে জুন মাসে একজন, জুলাইয়ে ৯ জন, আগস্টে ১১ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৪ জন এবং অক্টোবরে ৮৬ জন এবং নভেম্বরের গত ১৯ দিনে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও