বরিশালে বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ

জানুয়ারি ০৭ ২০২৩, ২২:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে মৌসুমের প্রথম শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে বলে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা রুবেল জানিয়েছেন। তিনি জানান, সকাল ৯টা থেকে বরিশাল অঞ্চলে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। সকাল ৯টায় বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে।

*হাড় কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত

* বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

* শীতে কাবু দক্ষিণাঞ্চলের শিশুরা

* শেবাচিমে একসপ্তাহে ৭ শিশুর মৃত্যু

এ মৌসুমে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এরআগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো শুক্রবার ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেল ৫টা পর্যন্ত বরিশালের বাতাসের গতিবেগ ছিলো ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে। আদ্রতা রয়েছে ৮৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৯. ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি জানান, শনিবার বরিশালে সূর্যের কিরন ছিলো মাত্র তিন ঘন্টা।

আকাশ মেঘলা ও ঘন কুয়াশা থাকার কারনে সূর্যের কিরন দুপুরের পর দেখা গেছে। এছাড়াও দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশ দিয়ে হিমেল হাওয়া দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। হিমেল হাওয়া ও সূর্যের কিরনের তাপ কম থাকায় শীত বেশি অনুভুত হচ্ছে। রুবেল আরো জানান, মধ্যরাত থেকে ঘন ও অতিঘন কুয়াশা পড়বে। এতে দৃষ্টিসীমা ৫০ থেকে ১০০ মিটারে নেমে যাবে। রোববার দুপুরের পর সূর্যের দেখা মিলবে। রাতের তাপমাত্রা আরো কমে যাবে।

এ অবস্থা আরো ২/৩ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। দেশে মাঝারি থেকে মৃদু শৈত্য প্রবাহ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে শীতের প্রকোপ যত বাড়ছে ততোই বাড়ছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। আর প্রকোপে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) এর শিশু ওয়ার্ডে ঝরে গেছে গত একসপ্তাহে সাত শিশুর প্রাণ।

তারপরও এ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে স্বজনের উপচে পড়া ভিড়্ দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই হাসপাতালে। ডাক্তার ও নার্স হিমশিম খাচ্ছেন রোগীদের সামলাতে। এই ঠান্ডায় কাউকে ফ্লোরিংএ দিতে পারছেন না, ফলে একবেডে দুজন এমনকি তিনজন করে রোগীর স্থান হয়েছে। ফলে একটি বেডকে ঘীরে তিনজন মাসহ স্বজনের ভিড়ে আরো বেশি অসুস্থ শিশুটি। ৭ জানুয়ারী শনিবার সকালে শেবাচিমের শিশু ওয়ার্ডের ৩টি ইউনিট ঘুরে দেখা যায় ১৫ জন নার্সের ব্যস্ত ছোটাছুটি। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ঘিরে ৫ জন ইন্টার্নি ডাক্তার রোগী দেখতে ব্যস্ত।

শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সুপ্তি জানালেন, শীতের সময় প্রতিবছরই আমাদের এই চাপ সামলাতে হয়। এক বেডে দু’জন করে শিশুরোগীকে রাখা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ১৪৭ জন এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে বলে জানান তিনি। অথচ শিশু ওয়ার্ডের স্থায়ী বেড আছে মাত্র ৩৬টি। অতিরিক্ত বেড বসানোর পরও অনেক রোগীকে ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে।

গত সাতদিনে গড়ে একজন করে শিশু মৃত্যু বরণ করছে বলে জানান সুপ্তি। শিশু ওয়ার্ডের তথ্য মতে গত একসপ্তাহে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার শিশু শেবাচিমে চিকিৎসা নিয়েছে এবং এই মুহূর্তে মোট ভর্তির পরিসংখ্যান বহিঃবিভাগ ও আইসিইউ নিয়ে হাজারের কাছাকাছি হবে। এখানে রোগী স্বজনদের অভিযোগ, একটি বেডে তিনজন করে শিশু, শিশুর স্বজন যদি থাকে কতটা ভিড় হয় একটু ভাবুন। ডাক্তার, নার্স আমাদের যত্ন নিচ্ছে কিন্তু এই বেড সমস্যাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা।

এত ভিড়েও কিন্তু থেমে নেই স্পেশাল বেডের বাণিজ্য। শিশু ওয়ার্ডে লিখিত বেডের সংখ্যা ৩৬টি অথচ এখানে এখন বেড রয়েছে ১০৭টি। দুটি গোপন ইউনিটে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে একজনের জন্য একটি বেড রয়েছে বলে জানান স্বজনরা। তবে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানালেন, আমাদের চিকিৎসক সংকটের কারণে আমরা পৃথক শিশু ওয়ার্ড চালু করতে পারছিনা। অল্পদিনের মধ্যে তৃতীয় তলায় সার্জারী বিভাগ সরিয়ে ওখানে ১০০ বেডের শয্যা হচ্ছে।

শিশু ওয়ার্ডের ১ ও ২ ইউনিট ওখানে স্থানান্তর করা হবে। তাছাড়া আমানতগঞ্জে সুকান্ত শিশু হাসপাতাল টি সম্পন্ন হলে শেবাচিমের চাপও কিছুটা কমবে। তার বক্তব্যের সুত্র ধরে বরিশালের আমানতগঞ্জে নির্মাণাধীন ১০০ শয্যার সুকান্ত শিশু হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ভবনের কাজ শেষ হলেও ভিতরের স্যানিটারি ও বাহিরের বিভিন্ন কাজ এখনো বাকী।

এটির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত বলে জানা গেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবন নির্মাণের কাজই আটকে আছে রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও