মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে রোগীগের ভোগান্তি চরমে

অক্টোবর ৩১ ২০২৫, ১৭:৪৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, সহায়ক জনবল ও সরঞ্জামের মারাত্মক সংকটে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন উপজেলাবাসী।

দৈনিক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী দেখতে না পারা ও কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার সম্ভব না হওয়ার ফলে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

মৌসুম ভেদে ডায়রিয়া কিংবা ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক রোগী হওয়ায় অধিকাংশ সময়ে বিছানা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় চিকিৎসক সংকটের ফলে হাসপাতালে আগত রোগীদের ভোগান্তি কমাতে প্রশাসনিক কাজ স্থগিত রেখে মেডিকেল অফিসারদের কক্ষের পাশের কক্ষেই রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রশাস্ত সাহা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ভর্তি রোগী দেখভাল করার জন্য নার্স আসলেও ডাক্তারদের নিয়মিত সাক্ষাত পাওয়া যায় না।

অপ্রতুল ডাক্তার ও রোগ নির্ণয়ের নূন্যতম সুবিধা না থাকার কারণে রোগীদেরকে বাধ্য হয়ে বাহিরে ডায়াগনষ্টিক ক্লিনিকে ডাক্তার দেখানোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।

হাসপাতালে গাইনি বিভাগ থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সিজারিয়ার অপারেশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

হাসপাতালের ভর্তি রোগীর রেজিষ্টার সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও রোগী ভর্তি রয়েছে ৮৫ জন, মঞ্জুরীকৃত ৫০ শয্যা বেডের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের ৪র্থ তলার ওয়ার্ডের ভিতরে ও করিডোরের ফ্লোরেই বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত একাধিক শিশু, নারী ও পুরুষ রোগীরা।

এছাড়াও বর্হিবিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ রোগী চিকিৎসা নেন এবং ৫০ শয্যার বিপরীতে প্রায়ই ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন বিভিন্ন রোগ নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো রোগী আসেন, কিন্তু ৩০-৩৫ জন রোগী দেখা সম্ভব হয়।

কর্তব্যরত সেবিকারা জানান, ৫০ শয্যা হলেও রোগী বেশি হওয়ায় অপ্রতুল জনবল নিয়ে রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একাধিক ওয়ার্ড, বর্হিবিভাগ ও জরুরি বিভাগ তাদেরকেই সামলাতে হয়।

এক্ষেত্রে রোগীদেরকে প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এদিকে চিকিৎসকরা বলেন, চিকিৎসার মান ভালো। তবে সহায়ক জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও একজন হারবাল বিশেষজ্ঞসহ মাত্র ৬ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টাল সার্জনসহ ২ জন থাকার কথা থাকলেও দুইটি পদই শূন্য রয়েছে। মেডিকেল কর্মকর্তা ৭ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৪ জন, এর মধ্যে ১ জন মেডিকেল অফিসার প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় রয়েছেন।

এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ১১০ জনের প্রয়োজন হলেও আছে অর্ধেকের মতো।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী মায়েদের পরামর্শ প্রদানসহ সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় না, যার ফলে বাহিরে প্রাইভেট ক্লিনিকে ১৬ হাজার থেকে ২০-২২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হচ্ছে।

এছাড়া কম খরচে চিকিৎসা করাতে ভাঙাচোরা রাস্তা মাড়িয়ে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে পটুয়াখালী জেলা অথবা বিভাগীয় শহর বরিশালে যেতে হচ্ছে। এ কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেনীর পরিবারের গর্ভবতী মা ও পরিবার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলার গাবুয়া গ্রামের মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার দুপুরে ভর্তি হয়েছি। এই দুই দিনে ডাক্তার এসেছে মাত্র একবার। হাসপাতালে কোথাও কোনো সিট না পেয়ে আমি ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছি।

দেড়বছর বয়সী কন্যা শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি পার্শ্ববর্তী বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের নাসিমা আকতার বলেন, আমার মেয়ে সাফা জান্নাত ডায়রিয়া আক্রান্ত, বুধবার বিকাল ৪টার দিকে ভর্তি করিয়েছি। বেড না পেয়ে বাধ্য হয়ে শিশু সস্তানকে নিয়ে ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার মতো অনেক রোগী ফ্লোরে বিছানা করে নিচ্ছেন। নার্সরা কিছুক্ষন পর পর এসে খোঁজ খবর নিলেও ভর্তির পরে ডাক্তার এসেছিল একবার। আজকে এখন (বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত) পর্যন্ত ডাক্তার আসেনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী থাকেন প্রায় ১০০ জনের মতো। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কম থাকায় নানা কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে আগত রোগীরা যাতে চিকিৎসার অভাবে ফিরে না যায় সে জন্য গত এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রশাসনিক অনেক কাজ স্থগিত রেখে বর্হিবিভাগে বসে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছি। চিকিৎসক, পর্যাপ্ত জনবল, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন ও রেডিওগ্রাফার সংক্রান্ত সংকটসহ সিজারিয়ান অপারেশন চালুর বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এই সমস্যগুলো নিরসন হলে হাসপাতালে আগত রোগীদের ভালো মানের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, মির্জাগঞ্জে ১লাখ ২৭হাজার মানুষের বসবাস। চিকিৎসা সেবায় তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপরেই নির্ভর করতে হয়। বছরে প্রায় ১ লাখ ৮হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও