ভুল চিকিৎসায় গর্ভবতী গাভীর মৃত্যুর অভিযোগে তোলপাড়: সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি

নভেম্বর ১৬ ২০২৫, ১৯:১৯

বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশালের বাবুগঞ্জে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসায় একটি গর্ভবতী গাভী মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ ইউএনও এবং ইউএলও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গাভীর মালিক। তবে সেই অভিযোগের সত্যতা পায়নি গঠিত তদন্ত কমিটি।

ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, রাতে ১১টি ইনজেকশন প্রয়োগের সাথে সাথে গাভী মারা গেছে বলে দাবি করা হলেও তদন্ত কমিটি নিশ্চিত করেছে, গাভী মারা গেছে পরদিন সন্ধ্যায়। অভিযোগকারী ওই রাতে চিকিৎসককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন, যা ঘটনার রহস্য সৃষ্টি করেছে। গাভীর মালিক কৃষক ছবুর হাওলাদার রাজনীতি না করলেও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা পশু হাসপাতালে চড়াও হওয়ায় ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে অভিযুক্ত চিকিৎসক শাহ আলম অভিযোগটিকে সাজানো ও পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার উত্তর দেহেরগতি গ্রামের কৃষক ছবুর হাওলাদারের ৯ মাস ১৫ দিনের অন্তঃসত্ত্বা একটি গাভী কিছুদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয়। এরপর তিনি এসিআই ওষুধ কোম্পানির ভেটেরিনারি ডিভিশনের বিক্রয় প্রতিনিধি মিরাজ হোসেনের পরামর্শে গ্যাস নিরাময়ের ওষুধ খাওয়ানোর পর গাভীটি একেবারেই খাওয়া ছেড়ে দেয়।

৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় ছবুর হাওলাদার শাহ আলমকে ফোন করে বাড়িতে ডাকেন। শাহ আলম গাভীর অবস্থার গুরুতরতা বিবেচনা করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে ছবুর হাওলাদার গাভীকে বাড়িতেই চিকিৎসা করার অনুরোধ করলে শাহ আলম স্যালাইন পুশ এবং কয়েকটি ইনজেকশন দেন। পরদিন সকালে গাভীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়।

পরদিন ১১ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে ছবি হাওলাদার উপজেলা পশু হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি প্রধান করা হয় উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মাহফুজ আলমকে। তদন্তে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট দুই ভেটেরিনারি পল্লী চিকিৎসকের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়।

গাভীর মালিক ছবুর হাওলাদারের দাবি, ইনজেকশন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাভী শুয়ে পড়ে এবং পরপর মারা যায়।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী কৃষক জাকির হোসেন ও কোয়াক ডাক্তার দুলাল হোসেনের মতে, গাভীটি অসুস্থ অবস্থায় ছিল এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা কম ছিল না, চিকিৎসক শাহ আলম যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মাহফুজ আলম বলেন, গাভীটি প্রেগন্যান্সি টক্সেমিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল (কিটোসিস), যা গর্ভকালীন এমন একটি অবস্থার নাম যেখানে গাভী খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে ডিহাইড্রেট হয়ে নেতিয়ে পড়ে এবং জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গাভীটি থার্ড স্টেজে ছিল এবং এই পর্যায়ে কোনো চিকিৎসা কার্যকর হতো না। উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহ আলম সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন।

অভিযোগে উল্লেখিত ১১টি ইনজেকশনের তথ্যও মিথ্যা; স্যালাইনের সঙ্গে মাত্র ৪টি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।

গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, গাভীর মৃত্যু কোনো ভুল চিকিৎসার কারণে হয়নি, বরং প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটি এই বিষয়ে প্রতিবেদনে সত্যতা যাচাই করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও