‘ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগি মাংসটাই, তাতেও ‍এবার লেগেছে আগুন’

সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৫, ১৪:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে ক্রমেই সাধারণ মানুষের জন্য ভরসা কমে আসছে। পেঁয়াজ, রসুন, ডালসহ অন্যান্য সবজি ও মাংসের দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোকে খাদ্য বাজেটের ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে মাংসের ক্ষেত্রে ভরসা হিসেবে বিবেচিত ব্রয়লার মুরগি আগে কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও সম্প্রতি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। যা কিছুদিন আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। অন্যদিকে সোনালি জাতের মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় পৌঁছেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে, অন্যান্য মাংসের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে যারা ব্রয়লার মুরগিতে নির্ভর করতেন, তারা এখনও বাজেটের বাইরে।

রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারে দেখা মিলল রোজিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূর। একহাতে ব্যাগ, অন্য হাতে টাকাভর্তি মানিব্যাগ। তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে হতাশ কণ্ঠে বললেন, গরু-খাসির মাংস তো বহু আগেই খাওয়া ছেড়েছি। মুরগির মাংসটাই ছিল ভরসা, এখন সেটাও নাগালের বাইরে চলে গেছে। প্রতি কেজি ১৮০-১৯০ টাকা! কীভাবে কিনব বলেন?

পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন ক্রেতা ব্যাংক কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলায় ভাবতাম মাছ-মাংস প্রতিদিনের খাবার হবে। এখন পরিবারে সপ্তাহে একদিন মাংস রান্না করলেই ভাগ্য ভালো মনে হয়। ডিমও ১৩৫-১৪০ টাকা ডজন! এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা কেন?

শুধু মুরগির মাংসেই দাম বেড়েছে এমন নয়; ফার্মের ডিমও প্রতিনিয়ত দামের চাপের মুখে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। ক্রেতারা মনে করছেন, ডিমও এখন কেবল বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কারণ মাংসের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের খাদ্য বাজেট সংকুচিত হচ্ছে। অন্যান্য মাংস যেমন গরু, খাসি বা দেশি মুরগির দাম আগেই অনেক বেড়ে গেছে। অনেক পরিবারের জন্য তা ক্রয়যোগ্য নয়। তাই আগে ভরসার উৎস হিসেবে বিবেচিত ব্রয়লার মুরগি তাদের প্রধান প্রোটিনের উৎস ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।

এদিকে বাজারে ইলিশ ও চিংড়ি মাছের দামে আগুন লেগেছে। এক কেজির বেশি ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম হাঁকছেন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। মাঝারি মানের (৪০০- ৫০০ গ্রাম) ইলিশ কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ইলিশ কেনা এখন অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

চিংড়ি মাছের দামেও লেগেছে বড় ধরনের উর্ধ্বগতি। বর্তমানে চাষের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এসব মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকত।

শুধু ইলিশ বা চিংড়িই নয়, অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। দেশি মাছের মধ্যে কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দাম আগের তুলনায় বেশি। একই সঙ্গে চাষের মাছ যেমন রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশের দামেও দেখা গেছে বাড়তি চাপ। বর্তমানে প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৬০ টাকা এবং পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মাংসের দামের অস্থিরতার কারণ কেবল সরবরাহ ও উৎপাদন খরচ নয়। পাইকারি বাজারের ঘাটতি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, মৌসুমি প্রভাব এবং মাঝে মাঝে মজুতদারি মাংসের দামে ঊর্ধ্বগতির জন্য দায়ী। খুচরা বিক্রেতাদেরও বাধ্য হয়ে এই বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম নির্ধারণ করতে হয়। ফলশ্রুতিতে, সাধারণ ভোক্তারা ভরসার উৎস হিসেবে ধরে রাখা ব্রয়লার মুরগিও ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। পরিবারগুলোকে প্রতিদিনের খাবারে মাংসের পরিমাণ কমাতে হচ্ছে। প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে ব্রয়লার মুরগির স্থিতিশীলতা না থাকায় পরিবারের পুষ্টি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

সরকারি পর্যায়ের পদক্ষেপ থাকলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। বাজারে নজরদারি, মজুতদারি নিয়ন্ত্রণ এবং পাইকারি বাজারে মনিটরিং জোরদার করা না হলে দাম নিয়ন্ত্রণ কঠিন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা ছাড়া ক্রেতাদের জন্য ভরসার জায়গা তৈরি করা সম্ভব নয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও