ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

পিআর বনাম সংস্কার—রাজনীতির অচলাবস্থায় গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা

সেপ্টেম্বর ০৭ ২০২৫, ২১:৪১

বিশেষ প্রতিনিধি: জাতির উদ্দেশ্যে সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে নোবেলজয়ী ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি—রমজানের আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

এ ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বেড়েছে। ভোটের তারিখ নির্ধারণ হলেও পন্থাভিত্তিক দ্বন্দ্ব — বিশেষত ‘পিআর (Proportional Representation)’ পদ্ধতি ও আগে থেকে কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র সংঘাত অব্যাহত আছে।

পাঁচ দলের অবস্থান ও দাবি

বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিরোধী; তারা বলছে, বর্তমান বাস্তবে পিআর কার্যকর করলে স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ ব্যাহত হবে এবং সেটি অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরির কারণ হতে পারে।

বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম-বিধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা প্রস্তুত থাকবে, কিন্তু পিআর নিয়ে চাপ রাজনীতিকে আরও খণ্ডিত করতে পারে—এই ব্যাখ্যাই তাদের স্থির অবস্থান নির্দেশ করে।

জামায়াতে ইসলামি ও অনুরূপ ইসলামি দলগুলো

জামায়াত এবং কয়েকটি ইসলামি ঐক্য গঠন পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে; তাদের যুক্তি—পিআর হলে ভোটের অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, ছোট দলগুলোর কণ্ঠর অধিকার বলা-পাওয়া সম্ভব হবে এবং “গণতান্ত্রিক প্রতিফলন” বাড়বে। তারা পিআরকে দেশের রাজনৈতিক পুনরায় ভারসাম্য করার উপায় মনে করছে।

এনসিপি/নতুন নাগরিক দল

নতুনভাবে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলছেন, একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র/জুলাই ডিক্লারেশন’ বাস্তবায়ন এবং ব্যাপক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না; প্রয়োজনে তারা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার হুশিয়ারি দিয়েছেন।

এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিদ্যমান রাজনৈতিক-প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে নতুন সংবিধান বা ‘Second Republic’ চায়—আর সে কারণেই তারা আগে থেকে কাঠামোগত পরিবর্তনের জোর দাবি করছেন।

বামপন্থি দলগুলোর অবস্থান

বাম দলগুলো তুলনামূলকভাবে পিআর পদ্ধতির পক্ষে। তাদের যুক্তি—এটি একতরফা সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে বাধা দিয়ে নীতিনির্ধারণে বহুপাক্ষিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। তারা শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায্য নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

গত বছরের ৫ আগস্টের ঘটনা ও এরপরের বিক্ষোভ-উত্তেজনার পর অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করেছে। এই নথি ও তার বাস্তবায়ন সম্পর্কেই এখন বড় রাজনৈতিক দাবি উঠে—কতটা দ্রুত ও মোটামুটি বাস্তবায়ন হবে সেটাই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বড় সূচক হবে বলে সকলে দেখছেন।

অনেকে মনে করছেন, যদি ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে অগ্রগতি না হয়, তাহলে বিশেষত এনসিপি ও কিছু নতুন গঠিত দল ভোটে অংশ নিতে অনিচ্ছুক হবে, আর তা নির্বাচনকে আন্তর্জাতিকভাবে ও ঘরে গ্রহণযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।

নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতি

নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) উদ্দেশ্য করে অন্তর্বর্তী সরকার রোডম্যাপ পাঠাচ্ছে এবং ইসির আলোচনা, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির কাজ চলছে—তবে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর আস্থা অর্জন করা হচ্ছে কিনা, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও প্রতিবেদক সংস্থাগুলোও নজর রাখছে; তারা বলছে— নির্বাচনের স্বীকৃতি পেতে হলে প্রতিটি প্রধান রাজনৈতিক পক্ষের অংশগ্রহণ, নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন— যদি এনসিপি, বিএনপি কিংবা এমনকি জামায়াতের মতো বড় অংশীদাররা কোনো কারণে (পিআর–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বা সংস্কারের অভাব) ভোটে অংশ না নেয়, তাহলে ফলাফলকে ‘সংকটকালীন’ বা ‘আংশিক বৈধ’ হিসেবে দেখা হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও কূটনৈতিক স্বীকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নড়বড়ে হতে পারে।

বিশেষত যখন দেশের মূল বিরোধীদলগুলোর অবস্থান ভিন্ন। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ, ভাবমূর্তি ও জাতীয় অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও ঊর্ধ্বগামী।

আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি দ্রুততর ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে না পারে, তবে নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়বে এবং ফলাফলকে গ্রহণযোগ্যতা মেলায় বড় সমস্যা হবে। একই সাথে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পুনর্গঠন না হলে আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকতে পারে।

বিশ্লেষণ ও সমাধানের উৎসাহ

নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে তিনটি বিষয় অপরিহার্য, (১) প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’–এর বাস্তব অগ্রগতি, (২) প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আন্তরিক সংলাপ ও নিরপেক্ষ মধ্যস্থতা, এবং (৩) ইসির স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের স্বীকৃতি। রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন কূটনৈতিকতার পর্যায়ে নেমে বিতর্কিত ইস্যুগুলো মিটিয়ে নেওয়াই সময়োপযোগী। ডিজিটাল ও মিডিয়া–স্বচ্ছতা বাড়িয়ে, ইসি ও স্থানীয় পর্যায়ে আস্থা তৈরি করা গেলে ভোটে অংশগ্রহণ বাড়বে এবং নির্বাচন বেশি গ্রহণযোগ্য হবে এটাই বিশ্লেষকদের মত। সূত্র-আমার সংবাদ

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও