থমথমে শেবাচিম হাসপাতাল

আগস্ট ১৪ ২০২৫, ১৮:২১

আরিফ হোসেন ॥  বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারীরা স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার দাবি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে হাসপাতাল কর্মচারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হন।

* স্বাস্থ্যখাত সংস্কার ॥ আন্দোলনকারী ও কর্মচারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ॥ আহত ২০
* ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ঘোষনা
* নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসক-স্টাফদের পাল্টা বিক্ষোভ

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা ১১ টায় কর্মবিরতির ডাক দিয়ে বিক্ষোভ করে গোটা হাসপাতাল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন কর্মচারীরা। এতে আন্দোলনকারী ও অনশনকারীরা অনেকটা সটকে পড়েছেন। এর পরে হাসপাতালের কর্মচারীরা প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারীদের দাবি ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে শেবাচিমের কর্মচারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিলে আন্দোলনকারীদের সাথে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শেবাচিম হাসপাতালের ৯ কর্মচারী ও আন্দোলকারীরে ১১ সহ প্রায় ২০ জনের মত আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

আন্দোলনের মুখপাত্র নাভিদ নাসিফ বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকে গণঅনশন ছিল। কর্মসূচিতে আন্দোলনকর্মীরা হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থান করছিলেন। এসময় হাসপাতালের অ্যাপ্রোন গায়ে কর্মচারী-নার্স-টেকনিশিয়ানরা চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীকে মারধর করেন এবং তার স্বজনদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর তারা অনশনে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেন কর্মচারীরা।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনকারীদের হামলায় আহত শেবাচিমের কর্মচারী রনি বলেন, অযৌক্তিক আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। তাঁরা শুধু শুধু আমাদের স্টাফদের মারধর করেছেন, চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এ জন্য আমরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হই। পরে আমাদের হাসপাতালের কর্মরত ষ্টাফদের বিক্ষোভের মুখে অনশনকারীরা হাসপাতালের প্রদান ফটক ত্যাগ করেছেন। এর পর দুপুর ১২টার পর থেকে হাসপাতালের গেটে আর কোনো অনশনকারী বা আন্দোলনকারীদের দেখা যায়নি।

এদিকে এক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, ১৭ দিন ধরে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের তিন দফা দাবিতে বরিশালে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় হাসপাতালের প্রদান ফটক আটকে ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই আন্দোলন চলমান থাকায় আমাদের রোগী নিয়ে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। আজ আন্দোলনকারী ও হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে মারামারি দেখে হাসপাতালের রোগীকে নিয়ে এখন থাকতে ভয় হচ্ছে।

অপরদিকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাধিক স্টাফরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালীন সময় ছাত্ররা আমাদের কটুক্তি করে দালাল বলায় তাদের ধাওয়া করা হয়। এসময় অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনকারীরা দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র সহ হাসপাতালের কর্মচারীদের হাতে আটক হলে পরে তাকে পুলিশে দেয়া হয়।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দিন রনি মোবাইল ফোনে জানান, তাদের ওপর হামলা হয়েছে, তবে কর্মসূচি এখনও চলমান রয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডেরিয়াল জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনির উভয়পক্ষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হাসপাতালের সকল স্টাফরা খুব ভয়ের মধ্যে কাজ করছে। আজ একটি মানববন্ধন ছিল। সেখানে থেকে ছাত্র-জনতা সরে গেছে।’

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বেল্লাল হোসাইন বলেন, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে আন্দোলন করা ছাত্র-জনতা ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।

বর্তমানে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক নাজমুল হুদা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় ৭ দফা দাবি পেশ কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষনা দেন।
নিরাপত্তার দাবিতে শেবাচিমে চিকিৎসক-স্টাফদের পাল্টা বিক্ষোভ
সকালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটোকে অবস্থান নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের দাবিতে গত ১৮ দিন ধরে করা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পাল্টা আন্দোলন হিসেবে চিকিৎসক-স্টাফরা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে দিনভর হাসপাতাল এলাকায় উত্তেজনা দেখা যায়। এ অবস্থায় হাসপাতালে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।’ শুক্রবারের মধ্যে পরবস্থিতি স্বাভাবিক না হলে হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী ধর্মঘটে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।

উল্লেখ্য, এরপূর্বে ১৩ আগস্ট সকালে বরিশাল সফরে এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল নগরীতে মশাল মিছিল করে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা।

গত ১৮ দিন ধরে ছাত্র-জনতা দেশের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি, গায়েবানা জানাজা, বিক্ষোভ মিছিল ও বরিশাল অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল।

এর আগে বুধবার গত ১৩ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে বরিশালের সব রাজনৈতিক দল, সচেতন নাগরিক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ তাতে আশ্বস্ত হয়।

পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, চিকিৎসক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দেনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। র্দীঘ সময় আলোচনা সভা চলে। আলোচনায় মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং মেডিকেল কলেজের পরিচালক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে জানান। অন্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও আন্দোলনকারী রাজি না হয়ে আন্দোলন আরো কঠোর করার হুশিয়ারী দেন।

বরিশাল
১৪-০৮-২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও