অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে

অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বরিশালের “শহীদ কাঞ্চন উদ্যান”

মে ৩১ ২০২৫, ০২:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান কাঞ্চনের নামে করা নগরীর শহীদ কাঞ্চন উদ্যানটি এখন মাদক সেবি, বিক্রেতা, ছিনতাইকারী সহ ইভটিজারদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। দেশের জন্য প্রান দেয়া বীর শহীদের নামকে সম্মানিত করে স্বরন রাখতে তৈরি করা পার্কটি এখন উল্টো অসম্মানের কারনে পরিনত হচ্ছে।

তবে একসময়ে মুসলিম গোরস্থান হিসেবে পরিচিত এই পার্কটি নির্মাণের পূর্বে নগরীতে মুসল্লিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিলো।

শহরের ব্রজমোহন স্কুলের (বিএম) পার্শবর্তী এই পার্কে প্রতিদিনই ঘটছে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। সিটির সাবেক মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরনের সময়ে তৈরি করা পার্কটি পার্শবর্তী এলাকাগুলোর সাধারন বাসিন্দাদের অবসরযাপন সহ নানা রোগে আক্রান্তদের শরীর চর্চার একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল।

কিন্তু ধিরে ধিরে অপরাধীদের আনাগোনা ও প্রভাব বিস্তার করে নানা ধরনের অপকর্ম করার কারনে পার্কটি এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। আগে এখানে প্রতিদিন নগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভীড় থাকতো। তবে এখন আর ভদ্রলোকদের এখানে পরিবার নিয়ে আসাতো দুরের কথা, একা আসতেও ভাবতে হয় একাধিকবার। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পার্ক সহ আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রয় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের করা ইভটিজিং এর হাত থেকে স্কুল কলেজের ছাত্রীরা সহ রেহাই পায়না বয়স্ক মহিলারা বলে জানায় অভিযোগকারীরা। একাধিক দলে বিভক্ত এসকল অপরাধিরা যেকোন সময় নিজেদের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। শুধু পার্ক নয়, বিএম স্কুল ও পার্শ্ববর্তী নার্সিং সেন্টারটিও এখন এসকল অপরাধিদের দখলে চলে গেছে বলে জানাগেছে।

যেখানে খুব সহজেই পাওয়া যায় ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাজা সহ প্রায় সব ধরনের মাদক। এমন একটি স্থানকে রক্ষায় দ্রুত আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেছে নগরীর সচেতন মহলের বাসিন্দারা। ট্রাফিক অফিসের কয়েকশত গজের মধ্যে এমন কর্মকান্ড দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর কোন জোরালো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সাধারন দর্শনার্থিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের প্রধান গেট এর আশপাশ ঘিরে বসে আছে ১৫/২০ কিশোর। তারা সেখানে বসেই গাজা সেবন করছে। উদ্ধত আচরনে করছে সড়ক থেকে অতিক্রম করা নারীদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি। তাদের কারনে পার্কে আসা একাধিক ব্যাক্তিকে তাৎক্ষনিক ফিরে যেতে দেখা গেছে। অন্যদিকে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বিএম স্কুলের গেটের সামনে চলে আসে ৫/৭ টি মোটর সাইকেল।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে তারা সবাই ফেন্সিডিল সেবন করতে এসেছে। স্কুলের মধ্য থেকেই ফেন্সিডিল কিনে সেবন করে তারা এসে পার্কের গেটে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। এসকল কর্মকান্ড কাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে সেই তথ্য জানায় স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানায়, পুরো এলাকাটিতে ছাত্রলীগ নেতা শাহারিয়ার আলম সাদ নামের যুবকের নিয়ন্ত্রনে চলে ফেন্সিডিল এর ব্যবসা। স্থানীয় শাহ আলমের ছেলে সাদ বর্তমানে একাধিক মামলার আসামী হয়ে কারাগারে থাকলেও তার অবর্তমানে ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছে তার সাগ্রেত আপন, জিন্নাহ এবং জামিল ওরফে নন্টে। সাদ আওয়ামীলীগ এর আমলে ছাত্রলীগ পরিচয়ের প্রভাবে ব্যবসা শুরু করে।

বিএম স্কুল ও কাঞ্চন পার্কটিই তার মাদক বিক্রয়ের প্রধান স্পট। সূত্রটি নিশ্চিত করে জানায় সাদ বিক্রয়ের জন্য আনা ফেন্সিডিল বিএম স্কুলের পুকুরের ঘাটলার নিচে, পার্কের বিভিন্ন কোনে গাছের নিচে, সীমানা প্রাচীরের পাশ ঘিরে গর্ত করে সংরক্ষন করতো বিক্রির জন্য। পার্কে লোকারন্য হলে তাদের এমন কর্মকান্ডে ব্যাঘাত হতো তাই দর্শনার্থীদের এরাই মূলত নানাভাবে বিরক্ত করে পার্কে আসতে অনাগ্রহী করে তোলে ধীরে ধীরে। এখনও প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে এরা। যা চাইলেই বন্ধ করতে পারে প্রশাসন বলে জানায় সূত্রটি।

তবে সেজন্য অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য সহ অভিযোগ পৌছাতে হবে প্রশাসনের কাছে। অন্যদিকে এলাকায় ইয়াবার ব্যাবসা নিয়ন্ত্রন করে নগরীর এক সময়ের চিহ্নিত কিশোর সন্ত্রাসী মাইনুল ইসলাম রানা ওরফে কইতর রানা। কিছুদিন আগে রানা ২০০ পিচ ইয়াবা সহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের অভিযানে আটক হয়। তার অবর্তমানে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছে রানার সহযোগি তানজিম। সূত্রটি আরও জানায়, পুরো এলাকায় ইভটিজারদের মুল হোতা হিসেবে রয়েছে জোনায়েত নামের এক কিশোর। সে সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক এক এজিএস এর ভাতিজা। তার সাঙ্গো পাঙ্গোরা পুরো এলাকায় নারীদের চলাচল অতিষ্ট করে তুলেছে।

এই দলটির যন্ত্রনায় স্কুল কলেজের ছাত্রীরা এখন এই সড়কে চলাচল করতে ভয় পায়। পার্কে আসা নারীদের বিভিন্ন সময় ইভটিজিং সহ নানা ধরনের হয়রানী করার অভিযোগ আছে জোনায়েত এর বিরুদ্ধে। এমন অবস্থা পূর্বে থাকলেও বর্তমানে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এরাই দিনে ইভটিজিং এবং অন্ধকার হলেই ছিনতাই এর মত কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরা সবাই এলাকায় চিহ্নিত হলেও হামলা সহ হয়রানীর ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায়না।

এ বিষয়ে পার্কে আসা এক নারী দর্শনার্থী জানায়, শিতলাখোলা এলাকার বাসিন্দা তিনি। আগে বিকেলে পার্কে শরীরচর্চা করতে আসতেন প্রতিদিন। কিন্তু বর্তমানে নিরাপদ বোধ করেন না। তার বয়স ৪০। এর পরেও তিনি সন্তানের বয়সি এই ছেলে পেলের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার হয়েছেন। বর্তমানে পার্কটির অবস্থাও ভালো নাহ। এরা সীমানা প্রাচিরের লোহার গ্রীল গুলো ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। অনিরাপদ এই পার্কে এসে বিপদে পরার আশংকায় এখন আর আসেন না বলে জানান এই নারী। শুধু তিনিই নয়, এখন এই পার্কে কোন ভদ্র লোকের আনাগোনা নেই বল্লেই চলে জানান তিনি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে।

এ বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এলাকাটি অনিরাপদ হয়ে ওঠায় প্রতিদিন তাদের জোরালো টহল চলমান রয়েছে। কিছুদিন পূর্বে শাহারিয়ার আলম সাদকে গ্রেফতার করেছেন তারা। এর পরেও অপরাধ কমেনি। দর্শনার্থী যারা হয়রানী হচ্ছেন তারা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে কেউ দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ দিচ্ছেন না। এটি দুখ:জনক বিষয়। পুলিশের পক্ষে একই সময়ে নগরীর সব স্থানের অপরাধ সম্পর্কে খবর রাখা কঠিন। এক্ষেত্রে নগরবাসীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহবান করেন তিনি।

ওসি মিজানুর রহমান আরও বলেন, অপরাধী ও তাদের করা অপরাধের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও