সংরক্ষিত বনে বনখেকোদের থাবা
মার্চ ০৫ ২০২৫, ২০:০১
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরযমুনা সংলগ্ন মাঝেরচরের সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। একে হুমকিতে পড়েছে ওই বন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একদিকে বন উজাড় হচ্ছে। অন্যদিকে উজাড় করা বনভূমি দখল করে মাছের ঘেরের আয়তন বড় করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কিন্তু এসব দুর্বৃত্তায়ন দেখেও বন রক্ষায় নিয়োজিত বন বিভাগ উদাসীন বন রক্ষায়।
সরেজমিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাছ কাটার আলামত লুকাতে কোনো কোনো গাছের গোড়া মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। আবার কোনোটির গোড়া ঢেকে রাখা হয়েছে শিকড়-বাকড় দিয়ে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, চক্রটি গাছ কেটে একসঙ্গে পাচার করতে না পারলে আশপাশের বাড়ির পুকুর ও মাছের ঘেরে লুকিয়ে রাখে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাছ কাটার বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ফাঁসাতে তার বাড়ির পুকুরে কিংবা মাছের ঘেরেই ফেলে রাখা হয় কাটা গাছের টুকরো।
চরযমুনার একটি ঘের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ঘেরে ৩০ থেকে ৩৫টি গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসাতে গাছগুলো ঘেরে ফেলে রাখা হয়েছে। কাটা গাছের কষের কারণে আমার ঘেরের অনেক মাছ মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।’
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী জাকারিয়া বলেন, ‘আমরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ। প্রতিবছর ঝড়-বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হই। এই বাগান আমাদের ঢাল হিসেবে কাজ করে। এই বাগানের কারণে আমরা অনেক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাই। কিন্তু দিন দিন এই বাগান উজাড় করে ফেলছে একটা মহল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একদিকে বন উজাড় হচ্ছে। অন্যদিকে উজাড় করা বনভূমি দখল হচ্ছে। সম্প্রতি উজাড় করা বনের জমি দখল করে জুয়েল সিকদার নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির মালিকানাধীন মাছের ঘেরের পরিসর বাড়ানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ২০২০ সাল থেকে বন ধ্বংসের মাত্রা বেড়ে গেছে। ধ্বংস করা বনের জমি দখল করে তখন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় মাছের ঘের করেন এই জুয়েল সিকদার। আওয়ামী লীগের পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও জুয়েলের দৌরাত্ম্য থামেনি। বর্তমানে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে জুয়েল সিকদার বনের জমি দখল করে নতুন বাঁধ নির্মাণ করে তার ঘেরের আয়তন বাড়িয়েছেন। ঘেরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বনের মধ্যে ভেকু দিয়ে তৈরি করছেন নালা ও কালভার্ট।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, জুয়েলের মাছের ঘেরের মধ্যে এখনও অসংখ্য কাটা গাছের অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে। নতুন বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়েও অনেক গাছ কাটা পড়েছে। কিন্তু সব দেখেও বন বিভাগ নীরব।
তবে অভিযুক্ত ঘের মালিক জুয়েল সিকদার বলেন, ‘আমি যখন মাটি কাটছি তখন এলাকার লোকজন এবং বন বিভাগের লোকজন সবাই দেখেছে। আমি তো চুরি করে ঘেরের মাটি কাটিনি। একটা গাছও আমার ঘরের মধ্য নাই। আমাদের রেকর্ডের জমি ও বন্দোবস্ত নেওয়া চাষের জমিতে ঘের করেছি। পারিবারিক শত্রুতা আছে যাদের সঙ্গে, তারাই বাড়াবাড়ি করছে আমার ক্ষতি করার জন্য।’
বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জের কানকুনিপাড়া ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতায় মাঝের চরের সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল। এই ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার বলেন, বনের ভেতর নালার মতো দেখছি। মাটি কাটার ভেকু মেশিন গিয়ে পাইনি। নিষেধ করে আসছি। বনের ভেতর যে আইল ছিল, সেটাই বড় করেছে, তাতে বনের ভেতর ১০০ মিটার পড়েছে।
এ ব্যাপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, ‘মাঝেরচর এলাকায় সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে মাছের ঘের করার বিষয়ে খবর পেয়েছি। বন বিভাগের রঞ্জ কর্মকর্তার সঙ্গে জায়গাগুলো পরিদর্শন করেছি। সরকারি জমি দখল করে যে মাছের ঘের করা হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদের জন্য শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’








































