চাঙ্গা ফল বেচাবিক্রিও,ইফতার সামগ্রীর দোকানে সতর্কতামূলক অভিযান
প্রথম রমজানেই জমজমাট বরিশালে ইফতার বাজার
মার্চ ০২ ২০২৫, ২২:১৬
আরিফ হোসেন ॥ বছর ঘুরে আবার এল পবিত্র রমজান মাস। প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বাহারি খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বরিশালে ব্যবসায়ীরা। রোজার মাসে নগরবাসীর কাছে বাহারি ইফতার সামগ্রীর স্বর্গরাজ্য।
বরিশালের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড়ে জমে উঠে নগরীর বগুরা রোড, চকবাজা, র্গীজ্জা মহল্লা,পুলিশ লাইনন্স, ফকির বাড়ী রোড সহ কয়েকটি পয়েন্টে। এবার প্রথম রমজানেই জমে উঠেছে বরিশালের ইফতার বাজার।
আজ রোববার (০২ মার্চ) নগরীর বগুড়া রোর্ড ও র্গীজ্জা মহল্লা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশেই ভ্রাম্যামাণ ইফতারের দোকান বসানো হয়েছে। দুপুর থেকে এই স্থান থেকে দোকানিরা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতারি কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করতে থাকে। বিকেলে বাড়ে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা মানুষের সমাগম। ক্রেতারা বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে পছন্দের আইটেম কিনতে দেখা গেছে। এছাড়া তৈরি করা হয়েছে নানা সুপরিচিত ঐতিহ্যবাহী খাবার।

দোকানগুলোতে দেখা মিলেছে ঐতিহ্যবাহী শাহী হালিম। বাটিতে বাটিতে সাজানো দাম ১২০ থেকে ৪০০ টাকা। উন্মুক্তভাবে বানানো হচ্ছে শাহী জিলাপি, যার দাম সাড়ে ২০০ টাকা। এরপরেই দেখা মিলেছে চিকেন বল, শাহী পরোটা, স্পেশাল পরোটা, টানা পরোটা, চিকেন নাগেট, চিকেন লেগ। আরও দেখা মিলেছে, চিকেন তন্দুরি, চিকেন কারি, গরু কারি, মাঠা, আস্ত গ্রিল, ছোট মুরগি, বড় মুরগি, কাবাব, টিকা কাবাব, নার্গিস চাপ, শাহী জিলাপি, ডিম চপ, রোস্ট, নূরানি লাচ্ছি, পনির, পরোটা, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ফালুদাসহ নানা আইটেম।
ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, আজকে কথা বলার সময় নেই। আগে বেচাকেনা করি তারপর কথা বলব। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রমজানের শুরুতেই পছন্দের ইফতার কিনতে নগরীর বগুড়া রোর্ডের নাজেম’স রেঁস্তোরা, পুলিশ লাইন্স রোর্ড হটপ্লেট, চকবাজারের ঘরোয়া রেঁস্তোরা, ফলপট্টি রোর্ডের আকাশ রেঁস্তোরা, হাজী বিরানী, বনফুল, রোজ গার্ডেন, নিউ গার্ডেন ইন রেস্তোরাঁ, হুপাস্র্, তাওয়া, রিভার ক্যাফে, চায়না প্যালেস, কিচেনসহ নামি দামি একাধিক রেঁস্তোরায় ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। নাজেম’স রেঁস্তোরায় বিভিন্ন আইটেমের পাশাপশি হালিম কিনতে লাইন দিচ্ছেন ক্রেতারা।

অপরদিকে নাজেম’স রেঁস্তোরার জিলাপিসহ বেশকিছু আইটেম বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। এছাড়াও পুরো নগরীতে ইফতারির দোকানের সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিকের মত। গত বছরের চেয়ে এ বছরের ইফতার আয়োজনে কিছুটা নতুনত্বের ছোঁয়া রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি,প্রতিবারের মতো এবারও বরিশালের ইফতার বাজার অনেকটাই নামকরা হোটেল-রেস্তোরাঁর দখলে রয়েছে।
এর বাইরে ঐতিহ্য অনুযায়ী, সড়কের পাশে ছোট-খাটো মৌসুমী দোকানীরাও ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ফুটপাতের এ বাজারেও রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। এদিকে ইফতার বাজারের পাশাপাশি রমজানে ফলের বাজারও কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দেখা মিলছে তরমুজের। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিতে-গলি ঘুরে দেখা গেছে, নগরের নামি-দামি রেস্তোরাঁ-হোটেলগুলো ইফতার বিক্রির জন্য অনেকটা উৎসবমুখব পরিবেশ তৈরি করেছে।

এর মধ্যে, বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত সময় পার করছে ইফতার বিক্রিতে। বিক্রেতারা বলেন, ক্রেতা আসছেন, দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু কিনছে। যেভাবে দাম বেড়েছে তাতে অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। মানুষের হাতে টাকা নাই; টাকা না থাকলে কিনবেন কীভাবে? ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা রাব্বি হোসেন বলেন, প্রতি বছরই নাজেম’স রেঁস্তোরার ইফতারির স্বাদ নিতে আসি। এবার রমজানের প্রথম দিন চলে এলাম। আমার পরিবারে মা- ও ভাই-বোনসহ সবাই এখানের খাবার পছন্দ করেন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করার সময় এই খাবারটি রাখতেই হয়। জিনিসের দাম বেড়েছে অনেক। এবারের আয়োজন বেশ জমজমাট হয়েছে।
অন্যদিকে রমজানের প্রথম দিনই বরিশালের ইফতার সামগ্রীর দোকানে সতর্কতামূলক অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রথম দিনে নগরীর বগুড়া রোর্ডের নাজেম’স রেস্তোরাঁ ও বটতলা এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় দোকানগুলোর খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া ঠিক আছে কিনা, ভেজাল যুক্ত খাবার বিক্রি হচ্ছে কিনা, খাবার পরিবেশন এর মান তদারকি করেন তারা।

তবে কোনো ধরনের অসংগতি না পাওয়ায় কোন দোকানকেই জরিমানা করা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান করা হয়েছে। পুরো রমজান মাস জুড়ে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এই অভিযানে ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়াও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রমজান ও ইফতার বাজারকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও রয়েছে তৎপর।








































