বরিশালে কবে শেষ হবে ভোগান্তি

নভেম্বর ১১ ২০২৪, ২০:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ২২ বছর পার হলেও এখনও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত সিটির ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া লাকুটিয়া খাল পাড়ের ১৪৭টি পরিবার।

ভাঙ্গা বাঁশের সাঁকো, জলাবদ্ধতা, দূষিত পানি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর জনদুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী এখানকার বাসিন্দাদের। একের পর এক জনপ্রতিনিধি আসলে গেলেও ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পায়নি লাকুটিয়া খাল পাড়ের ১৪৭টি পরিবারের ৬ শতাধিক মানুষ। বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকার সুবাদে তারা নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করলেও কোনো সুবিধা পান না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে নগরীর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া লাকুটিয়া খাল পাড় ঘুরে দেখা যায়, এই ১৪৭টি পরিবারের চলাচলের একমাত্র পথ একটি ভাঙা বাঁশের সাঁকো। সাঁকো পার হয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় বিসিক শিল্প নগরীর দেওয়াল ঘেঁষা খালের পাড়ে ১৪৭টি পরিবারের জন্য সরু একটি রাস্তা। আবার রাস্তার পাশে অর্ধেক জায়গায় বসে রান্না করছেন মহিলারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করলেও কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।

সন্তান, পূত্রবধূ ও নাতি নাতনি নিয়ে বসবাস করা ষাটোর্ধ্ব সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মেয়র-কমিশনার আয় আর যায়, কিন্তু এই এলাকার কোনো উন্নয়ন হয় না। ভোট আইলে হেরা খালি প্রতিশ্রুতি দেয়, ভোট গেলে আর কোনো খবর থাহে না।

কেমনে এই জায়গায় থাহি হে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটু বৃষ্টি হইলেই খালের ময়লা পানি সব ঘরের মধ্যে ঢোকে। তহন গুরাগারা লইয়া খাডের উফর বইয়া থাহোন ছাড়া আর উপায় থাহে না।

আরেক বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, প্রায় ৬০০ লোকজনের বেশি মানুষ এই ভাঙ্গা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। মেয়র-কমিশনাররা খালি আশার বাণী শুনিয়ে যায়, কিন্তু আমাগো চলাচলের পথটা কেউ ঠিক করে দেয় না। কতজন আইলো আর গেলো। কিন্তু এই বাঁশের সাঁকোটা কেউ ঠিক করে দেয় নাই। তাছাড়া এখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। মাঝে মাঝে দু’একটি এনজিও থেকে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাথী জানায়, এখানে শতাধিক কিশোরী রয়েছে, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কোনো ধরনের সহায়তা পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে দু’একটি এনজিও থেকে এসে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে যায়। এছাড়া এখানে একটি এনজিওর মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস’র নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, এই জনগোষ্ঠীর পাশে সিটি করপোরেশনের দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু তারা তেমন কোনো সহায়তা করে না। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোজেক্টের মাধ্যমে শিশু ও নারীদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর জন্য সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার পাশে দাঁড়ানো উচিত।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তারা এখনো সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সে আওতায় আসেনি। যদি তারা ট্যাক্সে আওতায় আসে তাহলে তাদের সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আভাসের উন্নয়ন কর্মী প্রদীপ দাস বলেন, স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থার কাজ করে যাচ্ছে আভাস। শুধু তাই নয় তাদের অভাসের পক্ষ থেকে টয়লেট ও তাদের সন্তাদের জন্য শিক্ষার উপকার দিয়েছি। এবং কি তাদের বিষয় গুলো নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কতৃপক্ষের সাথেও কথা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি তারা সিটির সব সুবিধা পান। খাকুটিয়া খাল পাড়ের বাসিন্দাদের দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রæত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান হোক এমনই প্রত্যাশা নগরবাসীর।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও