বেড়েছে ডিজিটাল প্রতারণা, জড়াচ্ছে শিক্ষিতরাও
নভেম্বর ১২ ২০২২, ১১:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে ডিজিটাল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রযুক্তি খাত। অথচ প্রযুক্তির এ সুফলকে ভালো কাজে ব্যবহার না করে ‘ডিজিটাল’ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে ব্যাংকের অর্থ হ্যাকিং-এমন কোনো সেক্টর বাদ নেই যেখানে প্রতারক চক্র হানা দিয়ে অর্থ ও তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে না।
সাধারণ প্রতারকদের মতো বর্তমানে শিক্ষিতরাও ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে ডিজিটাল প্রতারণায়। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হলেও কয়েক দিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও তারা শুরু করে প্রতারণা।
তথ্য-প্রযুক্তিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাইবার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিগত দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে ডিজিটাল প্রতারক চক্র।
প্রতারণার শিকারদের বেশিরভাগই মামলা করতে না চাওয়ায় এ সংক্রান্ত অপরাধের প্রকৃত তথ্য জানা যায় না। প্রতারণা থেকে মুক্তির জন্য আইনের প্রয়োগের চেয়ে নাগরিকদের প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা বেশি দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘একসময় প্রতারণার ধরন ছিল সাধারণ।
সময়ের সঙ্গে বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতারক চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে শিক্ষিত শ্রেণিও ব্যাপকভাবে ডিজিটাল প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষে চাকরি না পাওয়া, হতাশা ও অসৎসঙ্গ বেশি দায়ী।
’ তিনি বলেন, ‘সমাজ থেকে প্রতারণা চিরতরে বন্ধ হবে না। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব।’
প্রযুক্তিবিদ ও আইন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে যোগাযোগ, চাকরি দেওয়া, এমএলএল ব্যবসা, জিনের বাদশাহ সেজে উপকার করা, কম খরচে বিদেশ পাঠানো, মোবাইল ফোনে বড় পুরস্কার জেতা, জাদুর বাক্সে টাকাকে ডলারে রূপান্তর, কম দামে ভালো পণ্য বিক্রি, জমি লিজ ও প্লট বিক্রিসহ নানা ধরনের প্রলোভনে ফেলে প্রতারণা করে যাচ্ছে ডিজিটাল প্রতারক চক্র।
এসব চক্র ছলচাতুরীতে ভুলিয়ে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ ব্যাংকিং লেনদেন, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ প্রতিটি সেক্টর থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
একসময় সহজ-সরল মানুষকে নানা ছলচাতুরী ও মিথ্যা প্রলোভনে ফেলে ডিজিটালি প্রতারণা করলেও বর্তমানে শিক্ষিতরাও ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। আবার সাধারণ প্রতারকদের মতো শিক্ষিতরাও ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছেন ডিজিটাল প্রতারণায়।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়াসহ ফরিদপুরের বেশ কিছু এলাকায় পারিবারের সদস্যরাই ডিজিটাল প্রতারণায় সক্রিয়তার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা।
গত ২০ অক্টোবর নওগাঁর পত্নীতলা থেকে ডেটিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নারী সেজে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
তাদের কাছ থেকে ১০টি স্মার্ট ফোন, ২৫টি সিম, পাঁচটি মেমোরি কার্ড, দুটি ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, প্রতারকরা ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন ডেটিং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অবৈধভাবে ডলার লেনদেনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
মোবাইলে অবৈধভাবে বিভিন্ন অ্যাপ এবং গ্রুপের মাধ্যমে ডলার গ্রহণ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সূত্র মতে, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে ৯৮টি মামলার মধ্যে ৩২টি মামলা হয়েছে শুধু প্রতারণার।
অর্থাৎ মোট মামলার ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। একইভাবে ২০২১ সালেও সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে প্রতারণাসংক্রান্ত বিষয়ে।
পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রতারণা থেকে বাঁচাতে ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার অনিবন্ধিত সিম বিক্রি নিষিদ্ধ, অনুমোদনহীন মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের সচেতনতা।
প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন না হলে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। একইভাবে প্রতারিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনলাইন সেক্টরগুলোতে প্রতারণা সবচেয়ে বেশি।
অনলাইনে এখন জমি কেনাবেচা থেকে শুরু করে শাড়ি, কাপড়, গহনা, প্রসাধনী প্রায় সবকিছুই কেনাবেচা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, সমবায়ের নামে বা এমএলএম কোম্পানির নামে প্রতারণাও অনেক বেশি। যেমন ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত অনলাইননির্ভর ছিল।’
সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘প্রতারণা থেকে বাঁচতে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারসহ সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে খুবই সতর্ক হতে হবে।
কারও সঙ্গে যোগাযোগের সময় গোপন তথ্য শেয়ার করা যাবে না। তেমনি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়েবসাইটের কোনো তথ্য বা লিংক যাচাই না করে ক্লিক করা যাবে না।
আ/ মাহাদী








































