মুলাদির মনির হত্যাকান্ডে রাজিব সিআইডি’র জালে
নভেম্বর ১১ ২০২২, ২১:৪৯

গেল ২৩ মে রাতে মনির নিখোঁজ হলে পরদিন সকালে মুলাদীর চরকমিশনার গ্রামের ঘেরের পাশে হাত পা বাঁধা অবস্থায় গলাকাটা মৃতদেহ মেলে। হত্যাকান্ডের তিন মাস আগে থেকেই মনির মুলাদী ফেরিঘাটে বাস কাউন্টারের সত্ত্বাধিকারী গেল ৬ নভেম্বর সিআইডি’র হাতে গ্রেপ্তার হওয়া রাজিব হাওলাদারের সাথেই কাজ করতো। রাতে তার বাড়িতেই থাকতো। এনিয়ে হত্যাকান্ডের পর পহেলা জুন সরেজমিন অড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে বাবুগঞ্জ উপজেলার সাদেক খান গ্রামে রাজিব হাওলাদারের বাড়িতে গেলে তার মা মিনারা বেগম ওরফে ফিরোজা সরাসরি অস্বীকার করেন, হত্যাকান্ডের শিকার মনির কখনোই তাদের বাড়িতে ছিল না।
তবে এক সময় স্বীকার করেন কেবল ঈদের দিন খেয়ে দেয়ে তাদের বাড়িতে রাত কাটিয়েছিল মনির। আর ঘটনার দিন তার ছেলে রাজীবের সাথে মনিরের থাকা বা রাতে ঘুমানোর কোন প্রশ্নই আসেনা বলে জানান। পাশের বাড়ি কালাম হাওলাদার ও মাকসুদা বেগম সাথীর সাথে কথা হলে বলেন, তারা খুন হওয়ার দিন দুপুরেও দেখেছেন মনির হাওলাদারকে ভ্যানযোগে রাজীবদের বাড়ির ধান তুলতে। আর বিকেল বেলা সামনে রাজীব পিছনে মনিরকে হেঁটে ইটভাটার দিকে যেতে দেখেছেন। তারা আরো বলেন, প্রতিদিন দুপুরে সামনের নদীতে গোছল করে রাজীবদের বাড়িতে ভাত খেত রাতে ঘুমাতো খুনের শিকার মনির।
একথার সত্যতা মিলেছিল রাজীবের সাথে বাস কাউন্টারে কাজ করা মামলার বাদী পারভেজ হাওলাদারের কথায়। তিনি বলেছিলেন, মাস তিনেক আগে তার বড় ভাই মনির হাওলাদারকে রাজীব হাওলাদারের বাসের টিকেট কাউন্টারে সহযোগি হিসেবে কাজ দেন। বিনিময়ে খাওয়া এবং রাজীবদের বাড়ি থাকার ব্যবস্থা হয়। হত্যাকান্ডের শিকার মনিরের ছোট বোন নুপুর আক্তার রাজীবকে জিজ্ঞাসা করার কথার বিষয়ে ছোট ভাই মামলার বাদী পারভেজের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ঘটনার ৯ দিনের মাথায়ও ওদিন রাত সাড়ে নয়টার পর তার ভাই রাজীবের বাড়িতে ছিল কিনা, আর না গেলেও তাদের ফোন করে কেন জানায়নি; এমন প্রশ্নে পারভেজের সহজ জবাব- মামলার ঝামেলার কারণে জিজ্ঞাসার সুযোগ হয়নি তার। অথচ স্থানীয়রা বলেন, রাজীব ও পারভেজকে এই কাউন্টারে নিয়মিত কাজ করতে দেখেন তারা।
তবে রাজীব ও সাজাহান বেপারীকে সন্দেহভাজন বলে সিআইডি গ্রেপ্তার করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হত্যাকান্ডের শিকার মনিরের ছোটবোন নুপুর আক্তার। তার বক্তব্য হলো, একসময় রাজীবের বাড়িতে মনির থাকতো এবং ঘটনার দিনও রাজীবের বাড়িতে ছিল এমন বক্তব্য ছিল চাচাতো ভাইদের শিখানো। তারা মামলায় আসামী করেনি রাজীবকে তারপরও সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড চেয়েছে এটা পক্ষপাতদুষ্ট। তবে তিনি ভাইয়ের হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনা বের করতে মামলায় উল্লেখিত ১১ আসামীর পাশাপাশি রাজীবদেরও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেননি এমন কথাও বলেন। অপরদিকে মামলা সিআইডিতে কিভাবে গেল সে সম্পর্কেও তারা অবগত নন। তবে ভাই হত্যার বিচার দাবী করেন।
চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি সিআইডিতে গেলে এর তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, তিন মাস হলো মামলাটি তিনি দেখভাল করছেন। যে আসামী দুজনকে সন্দেভাজনের তালিকায় গ্রেপ্তার করেছেন তাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদ করেই মনির হাওলাদার খুনের প্রকৃত তথ্য বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করেন। তিনি এও বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি মামলাটির তদন্ত করছেন।
এদিকে মনির হত্যাকান্ডের পর ২৪ মে কামাল সর্দার ও তার ভাই জামাল সর্দারসহ একই পরিবারের ৮ জন এবং তাদের দুই ঘাট শ্রমিক আর এক প্রতিবেশী মিলে ১১ জনকে নামধারী আসামী করে মুলাদী থানায় মামলা হয়। গেল ২৫ আগস্ট ৯ আসামী আদালতে হাজির হলে বিচারক সবাইকে জেল হাজতে পাঠান। ২৮ সেপ্টেম্বর ১ ও ২ নম্বর আসামী ব্যতীত সবার জামিন মেলে। এই মামলায় ১ মাস ৩দিন জেল খেটে জামিন পাওয়া ফোরকান ফকির বলেন, তিনি ঘটনার দিন মুলাদী ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত ছিলেন। মামলার প্রধান আসামী কামাল সর্দার তার সমন্ধি হওয়াতে এর রেশে তাকেও আসামী করা হয়েছে। পুলিশ নয়; এখন সিআইডি তদন্ত করে রাজিব এবং সাহজাহান বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, এদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মনির হত্যার নেপথ্যে কারা তাদের নাম বেড়িয়ে আসবে। এনিয়ে কামাল সর্দারের বোন জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, আমার ভাইদের সাথে আগে থেকেই বিরোধ চলা আব্বাস গ্রুপের সহযোগি রাজিব হাওলাদারের বিরুদ্ধে তাদের মামলা রয়েছে। অপরদিকে গ্রেপ্তার হওয়া সাজাহান বেপারীর অতীত ইতিহাস সন্তোষজনক নয়। সিআইডিকে মাঝপথে কেউ ভিন্ন পথে প্রবাহিত না করলে কারা মনির হাওলাদারকে হত্যা করেছে তা জানা যাবে। সঠিক তদন্তে আমার ভাইয়েরা দায়ী হলে আপত্তি থাকবে না। তবে তার শঙ্কা কামাল সর্দারদের ফাঁসাতে নেপথ্যে অর্থের যোগানদাতা আর পদস্থ কর্মকর্তারা থাকায় মামলার তদন্ত কাজে বাধা না হয়।
লেখক: গল্পকার ও ব্যুরো প্রধান একাত্তর টেলিভিশন,বরিশাল।








































