সিঙ্গাপুরে বিএনপি নেতারা, আন্দোলনে বিরতি
আগস্ট ২৭ ২০২৩, ১২:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সরকার পতনে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে গেছেন বিএনপির চার শীর্ষ নেতা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গেছেন অসুস্থতার কারণে।
কেউ আছেন রাজনৈতিক কারণে। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
সবশেষ শনিবার সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর গেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিন দিন আগে একই উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে যান।
দুই মাস ধরে একই দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এমন সময় তারা দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেছেন যখন দিন কয়েক পরেই দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
শনিবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিবক বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজ আব্বাস।
সঙ্গে দুই ছেলেও গেছেন। জানা গেছে, ফলোআপ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন তারা। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন মির্জা আব্বাস।
গত মে মাসে পাকস্থলির সমস্যার কারণে সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ। এর আগে সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
এবার তার ফলোআপ করানোর কথা রয়েছে। এ ছাড়া তার স্ত্রী রাহাত আরা সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কয়েক বছর আগে মির্জা ফখরুলের ঘাড়ে ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়ে। এ ছাড়া তার গলার ধমনিতে রক্ত চলাচলেও জটিলতা রয়েছে। তখন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়।
গেল ২৮ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাবেক এই মন্ত্রী।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেনস্ট্রোক করে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ১৮ জুন ভর্তি হয়ে আট দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। জানা গেছে, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সিঙ্গাপুর গেছেন তার সহধর্মিণী বিলকিস আক্তার হোসেন ও ছোট ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন।
এদিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ৬ মাসের বেশি সময় ধরে বিদেশে আছেন বলে জানা গেছে। তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল্লাহ আল কায়েস জানান, টুকুর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা। তবে তিনি সেখানে গেছেন কি না জানা নেই।
টুকুর নির্বাচনি এলাকা সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান জানান, বিদেশে বসে অনলাইনে সাংগঠনিক বৈঠক করেন টুকু। প্রথমে তিনি লন্ডনে, পরে ইতালি এবং সবশেষ থাইল্যান্ডে ছিলেন বলে তাদের জানান। তিনি সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলেন।
গেল ২৬ জুলাই দুর্নীতির একটি মামলায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নয় বছরের কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায় বিচারিক আদালতে পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে এ বিএনপি নেতাকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিদেশ থাকায় আত্মসমর্পণ করেননি।
সম্প্রতি এ বিষয়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এখন দেশে গেলে শেখ হাসিনার জালে পড়তে হবে। নির্বাচনের আগে ফাঁদ পেতে রাখছে ওরা। দেখা যাক, পরিস্থিতির বদল হলেই দেশে ফিরব।’
এ ছাড়া চিকিৎসার কাজে কয়েক মাস ধরে দিল্লিতে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের মার্চে ভারতের শিলং আদালত তাকে খালাস দিলে কিছুদিন পর তিনি দিল্লি যান।
সেখানে তিনি স্ত্রীসহ অবস্থান করছেন। দিন কয়েক আগে থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে ছয় জনই এখন দেশের বাইরে। শর্তসাপেক্ষ মুক্তিতে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া, অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে টানা বিছানায় শয্যাশায়ী রফিকুল ইসলাম মিয়া।
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এটা ঠিক আছে, চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিদেশ গেছেন।
কিন্তু এখন আন্দোলনে কিছুটা বিরতি আছে। আর যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন। আর তারা বয়োজ্যেষ্ঠ। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতেই পারেন। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে তারা দেশে ফিরেও আসবেন।
এতে চলমান আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। বিদেশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো বৈঠক হতে পারে কি না?
জবাবে তিনি বলেন, ‘না, নাহ। এরকম কোনো পরিকল্পনা নেই। চিকিৎসা শেষ করেই তারা দেশে চলে আসবেন। মহাসচিব মনে হয় ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন। এক ও দুই সেপ্টেম্বর আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান রয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অসুস্থ হলে তো চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেই। আর টুকু সাহেব বিদেশে থেকেই সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দেশের বাইরে থাকায় যুগপৎ আন্দোলনে কোনো ঘাটতি হবে না বলে মনে করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক। তিনি বলেন, এখন আন্দোলনের একটু বিরতি আছে।
জরুরি চিকিৎসার জন্যই তারা বিদেশ গেছেন। চারদিনের মধ্যে ফিরেও আসবেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরপরই চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। তখন সবাইকেই মাঠে পাওয়া যাবে।








































