ঝালকাঠিতে পশু আমদানি ও বসন্ত রোগে লোকসানের শঙ্কা
জুন ২২ ২০২৩, ১২:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঈদুল আজহা আসন্ন। কুরবানির পশুগুলোর শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। হাটে বিক্রি করে অনেকে লাভ করবেন। আনন্দে উদযাপন করবেন ঈদ। তবে ঝালকাঠির পারিবারিক খামারিরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
ভারতীয় গরু আমদানি ও বসন্ত রোগ নিয়ে একরকম আতঙ্কে ভুগছেন তারা। খামার মালিকরা বলছেন, খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি।
গত বছরের চেয়ে এবার পশুর দাম চড়া যাবে। ভারতীয় গরু আমদানি না করা হলে খামারিরা দেখবেন লাভের মুখ। কিন্তু শোনা যাচ্ছে পশু আমদানি হবে। এতে দাম পড়ে যেতে পারে।
এদিকে অনেক জায়গায় গরুর দেহে বসন্ত রোগ দেখা দিয়েছে। এটি ছড়ালে প্রত্যাশা পূরণ হবে না। তাই আমদানি ও রোগের আতঙ্কে রয়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৮ হাজার ১২১টি। প্রস্তুত রয়েছে ১৮ হাজার ৮৬২টি।
এসব গবাদিপশুর মধ্যে রয়েছে ষাঁড় ৮ হাজার ১১১টি, বলদ ৩ হাজার ২৩১টি, গাভি ২ হাজার ১৮৮টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৫ হাজার ২৯৬টি ও ১৭টি ভেড়া।
জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে পারিবারিক খামারি রয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি। প্রস্তুত হওয়া পশু দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় কুরবানি উপলক্ষে বাণিজ্যিক খামার না থাকলেও পারিবারিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া। প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারিরা। বাড়তি লাভের আশায় বাড়িতে বাড়িতে পশুর বাড়তি যত্ন চলছে।
এদিকে বেড়েই চলছে গোখাদ্যের দাম। প্রতিদিন গোখাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫-৩০ ভাগ। অনেকে জানান, দিনমজুরদের দুই বছর আগে বেতন ছিল প্রতিদিন ৫০০ টাকা।
এখন প্রতিদিন ৭৫০ টাকা। এর চেয়ে বেশিও নেন। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে খামারিরা খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানি করলে প্রত্যাশা অনুযায়ী দামে পশু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। পাশাপাশি পশু বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে
সদর উপজেলার দারাখান গ্রামের পারিবারিক খামারি ওয়ালিউর রহমান বলেন, আমি দেশি-বিদেশি মিলে ১০টি ষাঁড় মোটাতাজা করছি।
আমার ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের পশু আছে। সদর উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকার কঙ্কন ব্যাপারী জানান, ১২টি গরু নিয়ে তিনি পারিবারিক খামার গড়ে তুলেছেন।
এর মধ্যে চারটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভি ও কুরবানিতে বিক্রির জন্য পাঁচটি বলদ রয়েছে। বাকিগুলো বিক্রির অনুপযোগী। তবে যেভাবে গোখাদ্যের দাম বেড়েছে, তাতে খরচ পুষিয়ে লাভ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য।
খামারি সুজন সরকার বলেন, গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুসির বর্তমান বাজারমূল্য ২ হাজার ২০০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা।
৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজি ধানের কুঁড়ার দাম ৯০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫ টাকা, যা আগে ছিল ১০ টাকা।
এ ছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে ৭-৮ দফা গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। বছরখানেক ধরে কষ্ট করে গরু কুরবানিতে বিক্রির উপযোগী করেছি। ভালো লাভ পাওয়ার আশা করছি।
কিন্তু দুশ্চিন্তা হলো, যদি ভারতীয় গরু হাটে ঢোকে তা হলে আমাদের পশুর দাম কমে যাবে। কাক্সিক্ষত দামে বিক্রি করতে পারব না। আবার অনেক পশুর গায়ে বসন্ত রোগ দেখা দিয়েছে।
কুরবানিতে বিক্রির উপযোগী পশুর দেহে যদি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয় তা হলে তো আমাদের চেষ্টা, আশা, ভরসা, পরিকল্পনা সবই শেষ হয়ে যাবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডা. মো. ছাহেব আলী বলেন, ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে।
গবাদিপশু ক্রেতা ও বিক্রেতারা যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিং লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
জেলায় প্রায় ১৯ হাজার পশু কেনাবেচা হবে বলে আমরা আশা করছি। জেলার চার উপজেলার প্রতিটি খামার পরির্দশন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ওষুধপত্র দিচ্ছি।








































