চুরির অপবাদে ২ শিশুকে নির্যাতন: প্রতিবাদ করায় পরিবারের ওপর হামলা
জুন ২০ ২০২৩, ১২:২৬
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল।। ঝালকাঠির রাজাপুরে দোকানে চুরির অপবাদে স্কুলপড়ুয়া দুই শিশুকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবাদ করায় শিশুদের মা-বাবা ও দাদিসহ পাঁচজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের রোলা গ্রামে গ্রামের চকিদারবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন শিশুশিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান (৭) ও রাকিব হোসেন (৯), তাদের বাবা অটোরিকশাচালক মিরাজ হোসেন (৩৬), মিরাজের স্ত্রী সাজিদা (৩০) ও মিরাজের মা ছনিয়া বেগম (৫০)। তারা রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নির্যাতনের শিকার শিশু হাফিজুর রহমান রোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণি ও তার ভাই রাকিব তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
নির্যাতনের শিকার দুই শিশু ও হামলায় আহতরা অভিযোগ করে জানান, শনিবার (১৭ জুন) রোলা গ্রামের স্কুল সংলগ্ন এলাকায় মিরাজের ছেলে হাফিজুর রহমান ও মৃত ফারুকের ছেলে তাওহিদ (৬) খেলাধুলা করছিল।
এসময় স্থানীয় শাহ জামালের ছেলে মুছা ওই শিশুদের ডেকে খাবার দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় জাকির মোল্লার দোকানের পেছনের দরজা খুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে টালিখাতা বের করায়। স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে শিশুদের আটকান।
তখন মুছা নিজের দায় এড়াতে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে ওই দুই শিশুকে চুরির অপবাদ দিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় লিটু মেম্বার উপস্থিত হয়ে তাওহীদ, মুছা ও হাফিজুর রহমানকে ছয় হাজার করে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
নিজের নাম বলে দেওয়ায় হাফিজুর রহমান ও রাকিবকে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় মারধর করতেন মুছা।
এতে ভয়ে দুই ভাইয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার দুই শিশুকে মারধরের কারণ জানতে চান তাদের বাবা মিরাজ হোসেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুছা, ইসান ও তার বাবা শাহ জামাল মিলে মিরাজ, তার স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান ও মাকে বেধড়ক মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আউয়াল (৬০) বলেন, হামলাকারীরা প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে মিরাজের বাড়ির সামনে থেকে তাদের ধরে মারতে মারতে বাড়ির ভেতের নিয়ে যান।
এসময় আত্মরক্ষার জন্য মিরাজ ও তার পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে হামলাকারীরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন এবং তাদের হত্যার হুমকি দেন।
রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আসলাম হোসেন লিটু বলেন, কাউকে জরিমানা করা হয়নি।
শিশুদের তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হয়। প্রকৃত ঘটনা জেনে স্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে বলা হয়েছিল।
চুরির অপবাদে ২ শিশুকে নির্যাতন, প্রতিবাদ করায় পরিবারের ওপর হামলা
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শাহ জামালের বাড়িতে গেলে তাদের ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। পরে যোগাযোগের চেষ্টা করে ইসান ও মুছা এবং তার বাবা শাহ জামালকে পাওয়া যায়নি।
তবে শাহ জামালের ভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শিশুদের মারধরের বিষয়টি দুঃখজনক। শাহ জামাল, ইসান, মুছা বাড়িতেই ছিল, হয়তো কোথাও গেছে। তবে তারা মারধর করেছে কিনা আমি জানি না।’
রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল হেলাল সিকদার বলেন, অভিযুক্তরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।








































