সাত মাস বন্ধ থাকার পর বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীসেবায় আবার আসছে স্টিমার
এপ্রিল ১৮ ২০২৩, ১২:১৭
মাহাদী হাসান, বরিশাল:: বন্ধ হয়ে যাওয়ার ৭ মাস পর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা- বরিশাল-বড়মাছুয়া-ঢাকা নৌপথে আবার স্টিমার চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে।
বিশেষ এই সেবার অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানী ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি মধুমতি নামের স্টিমারটি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
ঈদের আগে ও পরে ঢাকা থেকে চার দিন এবং বড়মাছুয়া থেকে চার দিনের জন্য বিশেষ এই সেবা চালু থাকবে। ঢাকা ও বড়মাছুয়া যাওয়া-আসার পথে স্টিমারটি চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরের কাউখালী, হুলারহাট এবং চরখালী স্টিমারঘাটে থামবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের সুবিধার্থে অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় রুটে স্টিমারের মাধ্যমে বিশেষ যাত্রীবাহী সেবা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি।
এর আগে যাত্রীসংকটের কারণে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-মোরেলগঞ্জ-ঢাকা পথে স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঈদ উপলক্ষে চালু হওয়া বিশেষ সার্ভিসে শুধু মধুমতি স্টিমারটি চলাচল করবে।
ঈদের বিশেষ সেবায় আগের মতো ঢাকা থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত নয়, ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া পর্যন্ত যাত্রীসেবা দেবে সংস্থাটি।
ঈদের আগে ১৮ ও ২১ এপ্রিল ঢাকার সদরঘাট থেকে থেকে বড়মাছুয়ার উদ্দেশে সন্ধ্যা সাতটায় স্টিমারটি ছেড়ে যাবে। আবার ১৯ ও ২৩ এপ্রিল বড়মাছুয়া স্টিমার ঘাট থেকে দুপুর ১২টায় ঢাকার উদ্দেশে স্টিমারটি ছাড়বে।
ঈদের পর ২৭ ও ৩০ এপ্রিল ঢাকা থেকে বড়মাছুয়া উদ্দেশে একই সময়ে এবং ২৯ এপ্রিল ও ১ মে বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে স্টিমার ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া বরিশাল স্টিমারঘাট থেকে ১৯, ২৩, ২৯ এপ্রিল ও ১ মে সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকার উদ্দেশে স্টিমার ছাড়বে।
পিরোজপুর পৌরসভার রাজারহাট মহল্লার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবাই স্টিমারে চলাচল করতাম। নৌপথে ভ্রমণের নিরাপদ ও আরামদায়ক বাহন ছিল স্টিমার। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি কবর শুধু ঈদ উপলক্ষে নয়, সারা বছর ধরে স্টিমার সার্ভিস চালু থাকুক।’
বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) খন্দকার মোহাম্মদ তানভীর হোসেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ স্টিমার সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে বড়মাছুয়া পর্যন্ত তৃতীয় বা সুলভ শ্রেণির যাত্রী ভাড়া সর্বনিম্ন ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি ডাবল কেবিনের ভাড়া (দুটি সিট) ৩ হাজার ৮৮০ টাকা। প্রথম শ্রেণির সিঙ্গেল (একটি সিট) কেবিন ভাড়া ১ হাজার ৯৪০ টাকা। এ ছাড়া ফ্যামিলি স্যুইটের জন্য গুনতে হবে ৫ হাজার ৭০০ টাকা।
ব্রিটিশ আমল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন পথে প্যাডেল স্টিমার চলাচল করত। এ ধরনের নৌযানের দুপাশে বিশালাকৃতির দুটি হুইল দিয়ে চালানোর জন্য এগুলোকে বলা হতো প্যাডেল স্টিমার।
বিআইডব্লিউটিসিতে প্যাডল স্টিমারের সঙ্গে ২০১৪ সালে এমভি বাঙালি ও ২০১৫ সালে এমভি মধুমতি নামে দুটি মোটর নৌযান স্টিমার সার্ভিসে যুক্ত করা হয়। এসব স্টিমার একসময় ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত করত।
২০১৯ সালের এপ্রিলে মোংলার ঘষিয়াখালী চ্যানেলটির নাব্যতা–সংকটের কারণে খুলনা পর্যন্ত না গিয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করত। প্যাডেল স্টিমার ছিল দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের নিরাপদ নৌ যাতায়াতের বাহন।
প্যাডেল স্টিমারের দুই পাশে হুইল (পাখা) ঘোরার কারণে বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টিতেও এসব নৌযান ভারসাম্য ধরে রাখতে পারে। বিভিন্ন সময়ে প্যাডেল স্টিমার এ পথে চলাচল করলেও ধীরে ধীরে স্টিমারের সংখ্যা কমতে থাকে।
সর্বশেষ বাঙালি ও মধুমতি স্টিমার দুটি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার ঢাকা সদরঘাট থেকে মোরেলগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যেত।
আবার বুধ ও শনিবার মোরেলগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ত। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-মোরেলগঞ্জ-ঢাকা স্টিমার সার্ভিস বন্ধ ঘোষণায় মধ্য দিয়ে শত বছরের ‘নির্ভরযোগ্য’ স্টিমার সেবার সমাপ্তি ঘটেছিল।’








































