মন্দা বাজারেও স্বপ্ন দেখছেন ঝালকাঠির সেমাই ব্যবসায়ীরা
এপ্রিল ১২ ২০২৩, ২৩:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: গত বছর প্রতি বস্তা ময়দার দাম ছিল ১৮০০ টাকা, যা এখন ২৮০০ টাকা। শুধু ময়দার দামই না, পাম অয়েল, বনস্পতিসহ যাবতীয় কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, সেইসঙ্গে শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। তৈরির পরিবেশও স্বাস্থ্যকর লাগবে।
এতে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রতি কেজি সেমাইয়ের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। মান ঠিক রেখে উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। মান ঠিক না রাখলে গ্রহণযোগ্যতা কমে যায় ক্রেতার কাছে।
প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ঘিরে ৫০০ বস্তা ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরি করি। চাহিদা কমায় এবার ২০০ বস্তা ময়দা দিয়ে কাজ করছি। স্বামীর পেশাই ছিল সেমাই তৈরি করা।
সে মারা যাওয়ায় আমাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। এসব কথা বলছিলেন ঝালকাঠি জেলা শহরের কলাবাগান এলাকার মিনার সেমাই কারখানার স্বত্বাধিকারী নাসিমা বেগম।
ঝালকাঠির পশ্চিম চাঁদকাঠি এলাকার মক্কা ফুড প্রোডাক্টের মালিক মো. আইয়ুব আলী বলেন, ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট সেমাইয়ের পাইকারি দর ২৫ টাকা।
আর লুজ বস্তা ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। কয়েক বছর ধরে একই দামে বিক্রি করছি। কিন্তু সেমাই তৈরির কাঁচামাল তেল, ময়দা, বনস্পতি এসবের দাম দুই বছরে বেড়েছে চারগুণ।
ঝালকাঠিতে মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে গড়ে উঠেছে ছয়টি সেমাই কারখানা। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে জেলার লোকজনদের সেমাইয়ের চাহিদা পূরণের জন্য এসব কারখানায় সেমাই তৈরির ধুম পড়েছে।
মক্কা, জেদ্দা, মদিনা, মিনার, কুলসুম ও সূর্যমুখী নামের ছয়টি সেমাই কারখানা রয়েছে ঝালকাঠি পৌর শহরে। রমজান মাস এলেই বাড়ে তাদের ব্যস্ততা।
তিনশোর অধিক শ্রমিক কাজ করেন কারখানাগুলোয়। আর এদের বেশিরভাগই মৌসুমি শ্রমিক। রমজান এলেই মিল মালিকদের ডাকে তারা কাজে আসেন।
কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঈদ সামনে রেখে পুরোদমে চলছে লাচ্ছা ও সলা সেমাই উৎপাদনের কাজ। মিল মালিকরা সেমাই সরবরাহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দূরত্ব অনুযায়ী ভ্যান, টমটম, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যান বোঝাই করে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররাও এসে সেমাই নিয়ে যাচ্ছেন।
কারখানা মালিকরা জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তারা মুনাফা কম পাবেন। কারণ তেলসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বাড়লেও বাজারে পাইকারি সেমাইয়ের দাম বাড়েনি।
শ্রমিক আলী আজিম বলেন, বাজারে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। গতবার যে বেতন পেয়েছি এবারও তাই রয়েছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা আমাদের বেতন বাড়াননি।
সেমাই তৈরির কারিগর মো. দুলাল হোসেন বলেন, ভোলা থেকে দুই মাসের জন্য ঝালকাঠিতে কাজে এসেছি। আমরা ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছি। আমরা পিপিই ব্যবহার করছি।
কোনো রং, কেমিক্যাল ছাড়াই শুধু ময়দা আর পানি দিয়ে শলা সেমাই তৈরি করি। শলা সেমাই কাঁচা থাকা অবস্থায় তেলে ভেজে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করা হয়।
নলছিটির দপদপিয়া থেকে আসা পাইকার ব্যবসায়ীরা জানান, ঝালকাঠির কারখানাগুলোতে কেমিক্যাল ও রং ছাড়াই সেমাই উৎপাদন করা হয়। তাই তারা প্রতি বছর এখানের মোকাম থেকে পাইকারি দরে সেমাই কিনতে আসেন।
মিনার মিল মালিক নাসিমা বেগম বলেন, আমাদের এখানে প্রশাসন, গোয়েন্দা, সাংবাদিক ও ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা প্রায়ই আসেন। কোনোরকম অসংগতি পেলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। তাতে কারখানার ব্যবসাসহ পুঁজিতেও ঘাটতি পড়বে। এ জন্য উন্নতমানের সামগ্রী দিয়ে অল্প ব্যবসায় স্বাস্থ্যসম্মত সেমাই তৈরি করা হয়।
ঝালকাঠি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী দাস বলেন, ঈদ বাজারে যেন অস্বাস্থ্যকর পণ্য বাজারজাত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
ইতিমধ্যে সেমাই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরির দায়ে মদিনা সেমাই কারখানাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।








































