ইশরাককে প্রধান আসামি করে মামলা: ভয়ে বাড়ি ফেরেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা
নভেম্বর ০৬ ২০২২, ০২:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলার জবাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাল্টা হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাক হোসেনসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই বিএনপির সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কের ভয়ে বাড়ি ফেরেনি গৌরনদীর বিএনপি নেতাকর্মীরা। বরিশাল-১ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ঈশ্বর হোসেনের গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছিল।
হামলা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। গৌরনদী বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দিয়েছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গৌরনদীর নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষ হলেও বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
জহির উদ্দিন স্বপন আরো বলেন, গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একবার গৌরনদী গিয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি আর এলাকায় যেতে পারছেন না। তিনি বলেন, যেখানে নেতারাই যেতে পারছেন না, সেখানে কর্মীদের অবস্থা একটু ভাবুন তো কি হতে পারে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ইশরাকের নেতৃত্বে তার দলের লোকেরা আমাদের দলীয় কার্যালয়, দোকান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তাদের হামলায় আমাদের নেতাকর্মীরা আহত হয়ে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের পর চার দলীয় জোটের নেতারা আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপরে নির্যাতন চালিয়েছিল। তার জবাব আওয়ামী লীগ এখনো দেয়নি।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন জানান, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, দলীয় কার্যালয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় মাহিলাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. রাসেল রাঢ়ি বাদী হয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামলা করেছেন।
ওসি আরো বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলায় ইশরাক হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া গৌরনদী উপজেলার বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান মিন্টু, সজল সরকার ও জাফরসহ ৭০ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর কার্যালয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গৌরনদী থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ইশরাক হোসেনের সফরসঙ্গী বরগুনার বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম, পাথরঘাটার বিএনপি নেতা পলাশ হোসেন এবং ভোলার বিএনপি নেতা সফিউদ্দিন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে ইশরাক হোসেন ৫০-৬০টি গাড়ির বহর নিয়ে বরিশালে যাচ্ছিলেন। শনিবার সকাল ৭টার দিকে মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান।
তখন স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা তাঁদের গাড়ি বহরের ওপর হামলা করেন। এ সময় তারা বহরে থাকা ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হন। হামলার পাল্টা জবাবে ইশরাকের সফরসঙ্গী বিএনপির নেতাকর্মীরা যুবলীগ নেতাদের ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয় মাহিলাড়া মডার্ন ক্লাব ভাঙচুর করেন।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের পাল্টা হামলায় যুবলীগ নেতা মো. রাসেল রাঢ়ি, বিলাশ কবিরাজ, ব্যবসায়ী নেতা মো. সহিদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা পলাশ কবিরাজ, আলীম হোসেন খানসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত পাঁচজনকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পর ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালে গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলাম। পথে মাহিলাড়া বাজার এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অর্তকিত হামলা করে আমার গাড়িবহরে। হামলাকারীরা বহরের অন্তত আটটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এতে আমাদের ১১-১২ জন নেতাকর্মী আহত হন।
হামলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইশরাক বলেন, আমরা যাতে সমাবেশে যেতে না পারি সেজন্যই এ হামলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের আটকে রাখতে পারেনি। সব বাধা অতিক্রম করে আমরা সমাবেশে পৌঁছে গেছি।
আ/ মাহাদী