ঘোষিত কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ
বিভক্ত হচ্ছে বিএনপি!
ফেব্রুয়ারি ২৭ ২০২৩, ১৮:০৮
খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ সদ্য ঘোষিত বিএনপির কমিটিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে নিস্কীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশালে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিএনপির বৃহত অংশের নেতাকর্মীরা।
নিজ দলের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে বিষোদাগার করে প্রায় প্রতিদিনই রাজপথে নামছেন পদবঞ্ছিত নেতাকর্মীরা। কমিটি নিয়ে দ্বন্ধের কারণে বিভক্ত হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। এ কারণে দলটির কর্মসূচিতে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে মারামারি, হাতাহাতি, নেতাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও টাকার বিনিময়ে নেতা বানানোর অভিযোগ উঠেছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে যেকোন ইস্যুতে মাঠে থাকতে চাচ্ছে বিএনপি। এজন্য কমিটি ঘোষণার দ্বন্ধকে ইস্যু বানিয়ে নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোধাগার করে রাজপথে থাকতে এটি বিএনপির একটি কৌশল হতে পারে।
এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও গৌরনদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এসএম মনির-উজ জামান মনির বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটিগুলোতে যাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখা হয়েছে তারা ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থী, জাতীয় পার্টি থেকে আসা নেতা ও ব্যবসায়ী। তিনি আরও বলেন, এমনকি গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে দুইজন প্রবাসীও রয়েছেন। এর থেকেই প্রমানিত হয় কমিটি গঠণের নামে কি পরিমান অর্থ বাণিজ্য হয়েছে। অন্যদিকে যারা ত্যাগী, মামলা-হামলার শিকার, তাদের কমিটিতে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিতর্কিত ওই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আশির দশক থেকে অদ্যবর্ধি দলের ক্লান্তি লগ্নে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম, আছি ও থাকবো। কিন্তু যাদের দীর্ঘদিনে একটিবারের জন্যও রাজনৈতিক মাঠে পাওয়া যায়নি, তাদেরকেই ঘোষিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির একাধিক নেতা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকবো, নাকি দলীয় কোন্দল মেটাবো, কিছুই বুঝতে পারছি না। দল ক্ষমতায় নেই তাতেই একে অপরের সাথে হানাহানিতে লিপ্ত হচ্ছে। ক্ষমতায় গেলে না জানি কী হয়। তারা আরও বলেন, যেখানেই কমিটি দেয়া হচ্ছে সেখানেই একটি পক্ষ মিছিল, মিটিং করে ঝড় তুলছে। এমনকি নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলছে। জেলার নেতাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে। এটা কী ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বুঝতে পারছি না।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে বিএনপির প্রায় সব উপজেলা কোন্দলে জর্জরিত। এরমধ্যে বরিশাল সদর, হিজলা, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী পৌর কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে গৌরনদী, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ উপজেলা ও পৌর কমিটি, বরিশাল সদর, আগৈলঝাড়া উপজেলার সদ্য ঘোষিত আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে পৃথকভাবে কয়েক দফায় ঝাড়ু মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, নিজ দলের কতিপয় নেতার কুশপুতুল দাহ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন পদবঞ্ছিত নেতাকর্মীরা। বিক্ষুব্ধরা কমিটি গঠণের নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে নিস্কীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখায় ঘোষিত কমিটিসহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী এবং আগৈলঝাড়ায় ঘোষিত কমিটিতে নিজ এলাকার রাজনৈতিক মাঠে না থাকা সাবেক সাংসদ ও দলের মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারীরা বেশি পদ পেয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ওই দুই উপজেলার রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থাকা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের অনুসারীরা।
সূত্রমতে, মুলাদী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন দলের নেতাকর্মীরা। ওই বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করে যুব ও ছাত্রলীগের নেতারা। এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস ছত্তার খানের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। মুলাদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস ছত্তার খান অভিযোগ করে বলেন, মুলাদী উপজেলা ও পৌর বিএনপির যে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে তাতে সরকার দলের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। যেকারণে পদবঞ্ছিত নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকার দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ বলেন, প্রতিটি উপজেলায় বিএনপির প্রভাবশালী একাধিক নেতা থাকায় কার লোক কমিটিতে বেশি স্থান পেল, কারা পেলনা, এনিয়ে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কমিটি করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকায় আমরা কমিটি ঘোষণা করেছি। এখন যেভাবে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে তাতে দল চালানো অসম্ভব হয়ে পরেছে। তাই অভিযোগগুলো দলীয়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনার পর সেখানেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পদবঞ্ছিত নেতাকর্মীরা। ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলে হামলা চালায় ঘোষিত কমিটির সমর্থকরা। এ ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, নতুন আহবায়ক কমিটি ভোটাভুটির মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে গঠণ করা হয়েছে। এখানে ভুলত্রুটি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। সেখানে বিক্ষোভের নামে নেতৃবৃন্দকে নাজেহাল করা কোন রাজনীতি হতে পারেনা।







































