নোট-গাইড বই বিক্রির ধুম!
ফেব্রুয়ারি ২১ ২০২৩, ১১:১৬
অনলাইন ডেস্ক :: শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ নয় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে গাইড বই। পাঠ্যপুস্তকের নোট বা গাইড বই বাজারজাত নিষিদ্ধ থাকলেও মেহেরপুর জেলায় অবৈধ নোট-গাইড বই বিক্রির ধুম পড়েছে। জেলা ও উপজেলা শহরের বইয়ের দোকানে প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে। নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের জাঁতাকলে ঝরে পড়ছে অনেক দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী। কতিপয় শিক্ষক ও কয়েকটি প্রকাশনীর প্রতিনিধিদের প্ররোচনায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সহায়ক নামে নোট-গাইড কিনতে বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, বিপরীতে লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
ভ্যান চালক হামিদুল ইসলাম বলেন, সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তার উপর মেয়েদের পড়াশোনার খরচ। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ উচ্চ মূল্যের গাইড বই। শিক্ষিত করার স্বপ্নে কিছুদিন আগে মেয়েকে কিনে দিয়েছেন গাইড বই।
এসব নোট গাইড বই শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রির লাভের কমিশন পাচ্ছেন লাইব্রেরি সমিতি ও শিক্ষক নেতারা। এদিকে লাইব্রেরি সমিতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সমিতির সদস্য ও সদস্যের বাইরে থাকা লাইব্রেরির মালিকরা। সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে নোট গাইড বিক্রি না করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেছে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতির এক সদস্য বলেন, সমিতির নিয়ম মানতে গেলে বেশি লাভ হবে কিন্তু ক্রেতা ঠকে যাবে। আমি কম মূল্যে বই বিক্রি করব কিন্তু সমিতির জরিমানার ভয়ে বিক্রি করতে পারছি না।
জানা গেছে, সৃজনশীল মেধাবিকাশ নিশ্চিত করতে ১৯৮০ সালের নোট বই (নিষিদ্ধকরণ) আইনে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বইও নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ২০০৯ সালের নভেম্বরে নোট-গাইড বই নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তৎকালীন পুস্তক সমিতির সভাপতি আবু তাহের। আপিল বিভাগে বিষয়টির উপর শুনানি শেষে ওই বছরের নভেম্বরেই আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে নোট-গাইড মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রি ও বিতরণ করা পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যায়।
জেলার বিভিন্ন লাইব্রেরি ঘুরে দেখা যায়, বছরের শুরু থেকে দিগন্ত, লেকচার ও পুথিনিলয়সহ বিভিন্ন পাবলিকেশন্সের নোট ও গাইড বইয়ে সব লাইব্রেরি ভরা। গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি শ্যামলী বুকল্যান্ড ও বই জগৎ, মেহেরপুর শহরের পপি লাইব্রেরি, কেদারগজ্ঞের ফারুক লাইব্রেরি। এদের তত্ত্বাবধায়নে জেলা জুড়ে নোট ও গাইডবই বিক্রি হয় বলে দাবি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও লাইব্রেরি মালিকদের।
তবে নোট গাইড নয় সহায়ক বই বিক্রি করছেন বলে শিকার করেছেন মেহেরপুর পপি লাইব্রেরির মালিক ও জেলা নোট গাইড সমিতির সভাপতি পাপ্পু ও সাধারণ সম্পাদক গাংনী বই জগতের মালিক বাবু।
জেলা নোট গাইড (লাইব্রেরি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক গাংনী বই জগতের মালিক বাবু বলেন, ৬০ হাজার টাকা দিয়ে সমিতির সদস্য হয়ে সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বই বিক্রি করতে কম মূল্যে কেউ সহায়ক বই বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একাধিক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরাই বিভিন্ন কোম্পানির নোট-গাইডের সহায়তা নেওয়ার কথা বলেন। শিক্ষকের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে এসে বায়না করে গাইড কিনতে হবে। এসব গাইড-নোটের দাম আকাশছোঁয়া। দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বিপাকে পড়ে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নিষিদ্ধ নোট-গাইডের প্রচলনে সরকারের ভালো উদ্যোগ সফল হচ্ছে না।
গাংনীর লাল্টু মিয়া জানান, বাধ্য হয়ে গাংনীর বই জগৎ থেকে পুথিনিলয় কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির নোট গাইড অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হয়েছে। গাইড ও নোট বই ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীর মূল বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গাংনী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা বলেন, আমরা নোই গাইড বই কিনতে নিরুৎসাহিত করছি।
এ প্রসঙ্গে মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভূপেশ রঞ্জন রায় বলেন, নিষিদ্ধ নোট-গাইড বিষয়ে চিঠি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নোটগাইড বই না কিনতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শিক্ষকরা নোট-গাইড কিনতে বাধ্য কিংবা উৎসাহিত করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমার বরিশাল/আরএইচ








































