বরিশালে গণপরিবহন বন্ধে সাধারণের ভোগান্তির আশঙ্কা
নভেম্বর ০৩ ২০২২, ১৮:৫৭

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন ও এর আগের দিন বরিশালে ডাকা গণপরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটির বরিশাল জেলা আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু ও সদস্য সচিব আরিফুর রহমান মিরাজ এই আশঙ্কা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘টানা দুইদিন বাস, লঞ্চ ও থ্রি-হুইলার বন্ধের ঘোষণা দুরভিসন্ধিমূলক। এতে বরিশাল জেলা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। চিকিৎসা সেবাসহ জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হবে।’ বরিশালে বাস ও থ্রি-হুইলার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে আগামি ৪ ও ৫ নভেম্বর। এছাড়া ভোলা থেকে বরিশাল রুটে বুধবার রাত থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে স্পিডবোট, বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ লঞ্চ চলাচলও।
জেলায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে ৫ নভেম্বর। গণসংহতি আন্দোলন বরিশালের ওই দুই নেতা বিবৃতিতে বলেন, ‘অতীতে একই সঙ্গে টানা দুই দিন সব বাহনের ধর্মঘট কখনও দেখা যায়নি। কিন্তু আগামি ৪-৫ নভেম্বর ধর্মঘটসহ বরিশালের সব হোটেল-মোটেলের আবাসন ব্যবস্থাও সীমিত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। ‘এহেন সিদ্ধান্ত জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে টানা দুই দিনে সব যানবাহনের ধর্মঘটের নিন্দা জানাই।’
স্পিডবোট-লঞ্চ বন্ধে ভোগান্তি শুরু ॥
সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা ঘোষণা ছাড়াই ভোলা-বরিশালে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হওয়ায় বুধবার রাত থেকেই যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে বরিশাল স্পিডবোট ঘাটে কিছু চালক অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী নিচ্ছেন। বিকেলে বরিশাল স্পিডবোট ঘাটে গিয়ে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। স্বপন খান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘স্পিডবোট বন্ধ করে দেয়ায় ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। ৩৫০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা করে চাচ্ছে তারা।’
আরেক যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ‘ভোলা থেকে বরিশালে স্পিডবোট বন্ধ করে দেয়ার সুযোগে বরিশাল স্পিডবোট ঘাটের মালিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ভোলা যাচ্ছে। এত ভাড়া দিয়ে ভোলা যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় এখন ঘাটেই বসে আছি।’ এ বিষয়ে বরিশাল স্পিডবোট মালিক সমিতির লাইনম্যান তারেক শাহ বলেন, ‘আমরা স্পিডবোট বন্ধ করতে কোনো নির্দেশনা পাইনি। বরিশাল থেকে স্পিডবোট যাচ্ছে, কিন্তু ভোলা থেকে কোনো স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে আসতে দিচ্ছে না। তাই ফাঁকা স্পিডবোট নিয়ে আসতে হচ্ছে ভোলা থেকে বরিশালে।
ক্ষতি পোষাতে ভাড়া একটু বেশি নেয়া হচ্ছে।’ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই রুটে লঞ্চও বন্ধ হয়ে যায়। সাইফুল মৃধা নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে সকালে ভোলা যাওয়ার জন্য লঞ্চঘাটে আসি। এসে জানতে পারি ভোর থেকে ভোলায় কোনো লঞ্চ যাচ্ছে না, আবার সেখান থেকেও কোনো লঞ্চ আসেনি বরিশালে।
এরপর স্পিডবোট ঘাটে গিয়ে দেখি তাও চলছে না। তাই বাধ্য হয়ে ঘাটেই বসে আছি।’ লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়ে মালিক সমিতি কিছু না জানালেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ভোলায় আওলাদ নামক একটি লঞ্চে বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে সকাল থেকে শুধু ভোলা রুটে লঞ্চ চলছে না। তবে মেহেন্দিগঞ্জ ও মজুচৌধুরীরহাট রুটের লঞ্চগুলো এখনও চলাচল করছে।
এমভি আওলাদ লঞ্চের মালিক হলেন ভোলা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইব্রাহিম খলিল। তার অভিযোগ, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার মালিকানাধীন লঞ্চে ভাঙচুর ও লুটপাত চালিয়েছে। ভোলা লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মোসলে উদ্দিন পেটোয়ারি জানান, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় তারা লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রেখেছেন।