বিলুপ্তপ্রায় গৈলার গোলা দিঘি
জানুয়ারি ১৪ ২০২৩, ১২:০০
ডেস্ক প্রতিবেদক: দূর থেকে দেখে মনে হবে একটি সবুজ মাঠ। কাছে এসে দেখা যায় কচুরিপানায় ভরা মৃতপ্রায় বিশাল এক দিঘি। বরিশালের চাঁদপুরা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গজনীর দিঘির মতো এটিও গৈলা ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রায় হাজার বছর আগে সুলতানি আমলে খনন করা এই গৈলা দিঘি মনসামঙ্গলের কবি বিজয় গুপ্তের স্মরণ বহন করছে।
এই দিঘিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে গৈলা বাজার। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে বেশকিছু গোলাঘর তৈরি হয়। ফলে দিঘির নামকরণ হয় গোলা দিঘি।
এখনো বেশকিছু প্রাচীন ভবনের ধ্বংসাবশেষের দেখা মেলে এখানে। দিঘির চারপাশে আছে পুরোনো দিনের সেই মন্দির, দালানকোঠা। আরও আছে ঐতিহ্যের চিহ্ন হিসেবে তিনটি খালের অস্তিত্ব। যার একটি গৈলা খাল, মনসার খাল ও দাসের খাল নামে পরিচিত।
যদিও খালগুলোর আঁকাবাঁকা পথে বাধা তৈরি করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ বা ভবন। ফলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এই খালগুলো। এ ছাড়া সড়কগুলোর বেশিরভাগই ভেঙে গেছে এখন। গত চার বছরে সড়কের কোনো উন্নয়ন না হলেও এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা।
অযত্নে অবহেলায় গৈলা দিঘিটি বিলীন হওয়ার পথে হলেও চোখ জুড়িয়ে যায় বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরের পাশের দিঘিটি দেখে। এর পেছনে যদিও ব্যবসায়িক কারণ বিদ্যমান। যার ফলে সযত্নে শোল, গজালসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছের চাষ হচ্ছে এ দিঘিতে।
দিঘির চারপাশে এখনো দেখা মিলে পুরোনো দিনের সেই মন্দির, দালানকোঠা।
স্থানীয়রা জানায়, মনসা মন্দির ও বিজয় গুপ্তের স্মৃতি স্থানটি দর্শনীয় করার চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে সড়ক ও পর্যটনের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে। সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে কবি বিজয় গুপ্ত স্মৃতি পাঠাগারের পেছনের অংশ ও আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। এর পাশাপাশি গোলার দিঘি ও পুরাতন পুরাকীর্তিগুলোকে সংরক্ষণ করা গেলে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর আয়তনের গৈলা ইউনিয়ন বা গ্রামটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
ইতিহাস বলে, সুলতানি শাসন আমলে হোসেন শাহ এই দিঘির খনন করেন। তখন কবি বিজয় গুপ্ত এ অঞ্চলের জমিদারি দেখতেন। তাকে সাহায্য করতেন স্থানীয় বৈদ্যরা। সংস্কৃতি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ছিল এই গৈলা। যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে সংস্কৃতির পাঠ নিতে আসতেন উচ্চবর্ণের হিন্দু, মুসলিম ও ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থীরা। তখন হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িঘর ছিল। নৌকানির্ভর ছিল যাতায়াত ব্যবস্থা। দাসের হাট ছিল প্রথম গড়ে ওঠা বাজার। ওখানেই এই গৈলার প্রথম পাঠশালা তৈরি হয়েছিল বলে জানান দাসবাড়ির সন্তান বরিশালের শিক্ষক নেতা আশিষ দাস গুপ্ত।
তিনি বলেন, আমাদের এই দাস বাড়িটি মূলত কবি কুসুমকুমারী (কবি জীবনানন্দ দাশের মা) দাসের বাড়ি। এই গৈলা বৈদ্যিক চিকিৎসার তীর্থ ভূমি ছিল। আমার পরদাদাদের একজন এ অঞ্চলে তালুকদার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি সুলতান আমলে বনৌষধি চিকিৎসক হিসেবে এই তালুকদারিপ্রাপ্ত হন। বংশানুক্রমে আমার দাদা ভগবতী চরণ দাস গুপ্ত এবং বাবা সত্যরঞ্জন দাস গুপ্ত বৈদ্য বা বনৌষধি চিকিৎসক ছিলেন। আমাদের তিন ভাই ও পাঁচ বোনকে তিনি সুশিক্ষিত করার চেষ্টা করছেন বলেই আজ আমরা কেউ শিক্ষকতায়, কেউ সাংবাদিকতায় সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। তাই সবার মতো আমাদেরও চাওয়া ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই গৈলা গ্রামের উন্নয়ন। এটিকে পর্যটন নগরী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি আমাদের সবার।
এ বিষয়ে আগৈলঝারা উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, স্থানীয় কিছু মানুষের স্বার্থপরতার কারণে দিঘিটির আজ এ অবস্থা। তারা বিভিন্ন কৌশলে ওখানে জমি ক্রয় করে এমন অবস্থা করেছে যে দিঘির চারপাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। ফলে দিঘিটি সংরক্ষণ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরাও চাই সরকারি উদ্যোগে এই ঐতিহাসিক গৈলা গ্রামটি পর্যটন স্পট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এ জন্য আমার তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা চলমান থাকবে।








































