খুঁড়িয়ে চলছে শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর
জানুয়ারি ০৭ ২০২৩, ১৭:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বানারীপাড়ার চাখার ইউনিয়নের শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর। ১৯৮২ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে চাখারের প্রাণকেন্দ্রে ২৭ শতক জমির ওপর শুরু হয় জাদুঘর নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ।
আয়তকার ভূমি পরিকল্পনায় ৪৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৬০ মিটার প্রস্থ এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরের এ জমিটি ‘বাংলার বাঘ’খ্যাত এ কে ফজলুল হকের নিজস্ব বসতভিটার অংশ।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে চালু হয় জাদুঘরটি। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শের-ই-বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে ও ধারণা দিতে ভূমিকা রেখে চলেছে জাদুঘরটি।
দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক মহান এ নেতার স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন। এখানে বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে এসেছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপ, এমপি, দেশবরেণ্য রাজনীতিক, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিদেশি দর্শনার্থী, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক।
কিন্তু বহুতল ভবন নির্মাণসহ জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করতে এত বছরে গ্রহণ করা হয়নি কোনো পদক্ষেপ। তাদের অভিযোগ, পরিদর্শনের সময় অনেকেই অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা থেকে গেছে প্রতিশ্রুতির মধ্যেই।
এমনকি শের-ই-বাংলার একমাত্র পুত্র প্রয়াত একে ফায়জুল হক তিনবার সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন সময় সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও পিতার স্মৃতিঘেরা এ জাদুঘরটিকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে গ্রহণ করেননি কোনো পদক্ষেপ।
জানা যায়, বর্তমানে এখানে ৭ জন স্টাফ কর্মরত। জাদুঘরের ভেতরে কক্ষ রয়েছে মোট ৫টি। জাদুঘরে রয়েছে ৩টি ডিসপ্লে রুম, একটি অফিস ও লাইব্রেরি রুম এবং একটি ডরমেটরি।
ঢুকেই হাতের বাঁ দিকে শের-ই-বাংলার একটি বিশাল প্রতিকৃতি। জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে তার জীবনকর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, রাজনৈতিক, পারিবারিক ছবি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তার বিভিন্ন কর্মকা-ের ছবি।
জাদুঘরে মহান এই নেতার ব্যবহৃত নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাম কেদারা, কাঠের খাট, তোশক, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, টুল, চেয়ার-টেবিল, হাতের লাঠি, পানীয়জলের গ্লাস, কিছু মালপত্র।
মাঝের বড় দুটি কক্ষে শের-ই-বাংলার বিরল আলোকচিত্র, ব্যবহৃত আসবাবপত্র, চিঠিপত্র ও দ্রব্যাদিসহ একটি কুমিরের খোলস রয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, জাদুঘরের এক তলা ভবনটি ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ, শের-ই-বাংলার শৈশব, কৈশোর, ছাত্রজীবন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে তার ওপর গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, পর্যটকদের সঙ্গে আসা শিশুদের জন্য পার্ক নির্মাণ, পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসস্থল, শের-ই-বাংলার বিষয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও দক্ষ জনবল বাড়ানোসহ জাদুঘরটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হলে দর্শনার্থী পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
এ ছাড়া ব্যক্তিবিশেষের দখলে থাকা শের-ই-বাংলার বিশ্রামাগারটিকে জাদুঘরের অধীনে নিয়ে মহান এ নেতার স্মৃতিঘেরা প্রতিষ্ঠানটিকে সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চাখার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির সরদার।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহে আলম বলেন, অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও বরেণ্য নেতা শের-ই-বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ও তার আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সঙ্গে আলাপ করে তার স্মৃতি জাদুঘরটিকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।








































