এক বছরেও সন্ধান মেলেনি সুগন্ধায় লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ ৩০ মরদেহের
ডিসেম্বর ২৪ ২০২২, ১৭:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা লঞ্চটি ২৪ ডিসেম্বর ভোর রাতে অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ঘটনাস্থল থেকে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু ৩৬ জনের, নদী থেকে মৃত উদ্ধার ৪জনের এবং বরিশাল ও ঢাকা হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৭জনের।
এ ৪৭টি মরদেহের মধ্যে ১৭ জনকে শনাক্ত করা গেলেও বাকি ৩০ জন অজ্ঞাতই রয়ে গেছে। নিখোঁজদের মধ্যে ১৩ শিশু, ১১ নারী ও পুরুষ ৮ জন।
নিখোঁজ ৩২ জনের জন্য ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন ৫১ জন স্বজন। ইতিমধ্যে পোড়া লঞ্চটিও সংশ্লিষ্ট আদালতের নির্দেশে নিয়ে গেছে মালিক পক্ষ, তবে এখনও চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়নি লঞ্চে অগ্নিকান্ডে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সদর থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর সুগন্ধা নদীতে অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহতের স্বজন মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি একটি এজাহার দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শুরু করলে সংশ্লিষ্ট আদালত ঢাকার নৌ আদালতে মামলাটির নথিপত্র হস্তান্তর করে।
মামলাটির তদন্তে এখনও ডিএনএ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষমান আছি। ডিএনএ রিপোর্ট পেলে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। নৌ আদালতে মামলাটি চলমান আছে।
তিনি আরও জানান, নৌ আদালতের নিদের্শে মালিকদের জিম্মায় লঞ্চ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার দিন ৩৬টি লাশের সুরতহাল করে ১৪ জনের মৃতদেহ শনাক্ত করি।
প্রথমত আমরা ৪জনকে এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক ৯জনকে শনাক্ত করেন। তাসহ ডিএনএ রিপোর্টে সর্বমোট আমরা ১৭ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছি।
অতিরিক্ত পোড়ার কারণে ডিএনএ প্রোফাইলে ১৬জনের এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন দিতে পারেনি। শনাক্তকৃতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তথ্য মতে, নিখোঁজ ৩২ জনের জন্য তাদের ৫১ জন স্বজন ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন।
এক বছরেও শেষ হয়নি ডিএনএ পরীক্ষা। এ ছাড়া বেওয়ারিশ হিসেবে বরগুনার গণকবরে দাফন করা হয়েছে ২৩ জনের লাশ। নদী থেকে উদ্ধারের পর একজনকে সনাতন ধর্মাবলম্বী ধারণা করে ঝালকাঠি পৌর মহাশ্মশানে সমাহিত করা হয়েছে।
সুগন্ধায় অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন ও নৌমন্ত্রণালয় তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুন লেগেছে বলে জানানো হয়।
এ জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। লঞ্চের ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই আগুন লেগেছে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা না রাখার দায়ে ঢাকা ও বরগুনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
বরগুনায় লঞ্চ মালিকের নাম উল্ল্যেখ করে ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাত শ্রমিককে আসামি করে মামলা করেছেন স্থানীয় বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম।
এ ছাড়া ঘটনার ২ দিন পর ঢাকায় নৌ আদালতে মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান। ওইদিনই নৌ আদালত লঞ্চের চার মালিক এবং দুইজন মাস্টার ও দুইজন ড্রাইভারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় আসামি লঞ্চের চার মালিকরা হলেন- মো. হামজালাল শেখ, মো. শামীম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি।
মাস্টার ও ড্রাইভাররা হলেন- প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইনচার্জ মাস্টার মো. খলিলুর রহমান এবং প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ ড্রাইভার মো. মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার আবুল কালাম।
তাদের বিরুদ্ধে নৌযানে পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না রাখাসহ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর চারটি ধারা লংঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজহারে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারা লংঘনের কথা উল্ল্যেখ করা হয়েছে।
তবে ওই ঘটনায় লঞ্চের ৪২ জন যাত্রীর মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও দন্ডবিধির কোনো ধারা এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি।
এতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখা, বিপজ্জনক মাল পরিবহণ, উপযুক্ত ও বৈধ সনদপত্র ছাড়া মাস্টার-ড্রাইভার নিয়োগ দেওয়া এবং অসদাচরণের কারণে জাহাজ বিপদাপন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসব ধারা ভঙ্গের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে এমনটি নৌ আইনে উল্লেখ আছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।








































