বরিশালে ব্যাটারি রিকশার দাপটে বিলুপ্তির পথে পায়ে চালিত রিকশা

ডিসেম্বর ২১ ২০২২, ২২:০৪

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অটোরিকশা বা ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দাপটে বিলুপ্তির পথে বরিশাল নগরীর বৈধ পায়ে চালিত রিকশাগুলো। হাতেগোনা যে কয়টি রিকশা টিকে আছে তারাও এখন খুঁজছে বিকল্প পথ। এদিকে প্রতিদিন অটোরিকশা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি। তবুও এসব নিয়ে নিরব নগর কর্তৃপক্ষ।

স্বয়ং ট্রাফিক বিভাগের মতে, দশ হাজারের বেশি অবৈধ যানবাহনের কাছে জিম্মি এখন বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা। দ্রুত গতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়া, যত্রতত্র পার্কিং, যানজট বৃদ্ধি ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগসহ এ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ শুনেও নিরব সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে বরিশাল নগরীর রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ, নতুন বাজার, নবগ্রাম রোড, সদর রোড, বিবির পুকুর পাড়ের হেমায়েত উদ্দীন সড়ক, পোর্ট রোড থেকে শেরেবাংলা মেডিকেল পর্যন্ত ঘুরে প্রায় হাজার তিনেক অটোরিকশা ও ৭ হাজারের বেশি ইজিবাইকের উপস্থিতি টের পাওয়া গেল ২১ ডিসেম্বর বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। শো শো গতিতে ছুটে চলা অটোরিকশাগুলো নিয়ে ইজিবাইক চালকদেরও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। একজন ইজিবাইক চালক বললেন, আমরাতো সিটি করপোরেশনের স্টিকার নিয়ে চালাচ্ছি। তবে প্রতিদিন স্টিকারবিহীন প্রায় ১০০ নতুন ইজিবাইক ও অটোরিকশা শহরে ঢুকছে। সেগুলোর কি হবে?

এদিকে নগরীর শহীদ মিণারের সামনে থেকে সদর রোডে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও বাইপাস অলিগলিতে এরা নিষিদ্ধ নয়। ফলে সদর রোডে হাতেগোনা কয়েকটি পায়ে চালিত রিকশার দেখা পাওয়া যায়। পিরোজপুর থেকে জীবিকার তাগিদে নগরীতে এসে রিকশা চালান বয়োবৃদ্ধ মোঃ হানিফ। পায়ে চালিত রিকশা নিয়ে ছোটখাটো পথে যাত্রী খুঁজে বেড়ান তিনি। ঘরভাড়া করে থাকেন দক্ষিণ আলেকান্দায়। হানিফ বলেন, পায়ে টানা রিকশায় এখন আর যাত্রী উঠতে চায়না। শুধু সদর রোডের যাত্রীরাই ওঠেন বেশি। আমার সামর্থ্য নেই, তা না হলে আমিও অটোরিকশা বানিয়ে নিতাম।

জানা গেল, নগরীতে এখন প্রতিদিন গড়ে দশটি অটোরিকশা তৈরি হচ্ছে ও রাস্তায় নামছে। শহরের সীমানাতেই কাশিপুর, রূপাতলী, নবগ্রাম রোডের বিভিন্ন গ্রেজে তৈরি হচ্ছে এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজিবাইক । কেউ কেউ নিজ ঘরের আঙ্গিনায় লুকিয়ে তৈরি করছেন এসব যানবাহন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)’র উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক এস এম তানভীর আরাফাত জানালেন, নগরীতে বৈধ যানবাহন রয়েছে মাত্র তিনহাজার আর অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা এখন দশহাজার ছাড়িয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সর্বোপরি সিটি করপোরেশনের ভূমিকা খুবই জরুরী। তানা হলে আগামীতে সমস্যায় পরবেন বরিশালবাসী নিজেরাই।

আগামীতে নয়, এই মুহূর্তেই এইসব অটোরিকশা নিয়ে চরম সমস্যায় জর্জরিত আমরা দাবী করে বরিশালের পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, অটোরিকশাগুলো নগরীর বিষফোঁড়া এখন। এগুলোর যন্ত্রণায় রাস্তা পার হতেও আতঙ্কিত আমরা। যখন তখন উল্টে যাচ্ছে। এরফলে অবৈধ বিদ্যুৎ খরচ বাড়ছে।

এ মূহুর্তে বরিশাল শেরেবাংলায় কম হলেও ১০ জন পাবেন যারা অটোরিকশা দূর্ঘটনার শিকার। তবে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শহরের পরিকল্পিত পূনর্বিন্যাসের প্রয়োজন। শহরের সীমানা ৫৮ বর্গকিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি করতে হবে। কড়াপুর, চরকাউয়া, চাঁদপুরা ও শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের সীমানায় নিয়ে আসতে হবে।

প্রায় একইকথা বললেন, বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক কে এস এম মহিউদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, বাম আন্দোলনের নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী এটা নিয়ে কাজ করছিল দেখেছি। কিন্তু তার সে আন্দোলন কতটা কি হলো জানিনা। বৈধ রিকশাগুলো রেখে বাকী সব তুলে দেয়া জরুরী।

মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারিনা এই অটোরিকশাগুলোর জন্য। অন্যদিকে ইজিবাইকগুলো দেখুন, যাত্রী নেই তারপরও ছুটছে। এই শহরের সড়কের নিয়ন্ত্রণ যে কার তাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

শ্রমিক আন্দোলনের নেতা পরিমল দাস জানান, আমরা প্রায় পাঁচ হাজার ইজিবাইককে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য স্টিকার দিয়েছি। এগুলোর বাইরে সবই অবৈধ। মেয়র মহোদয় খুব শীঘ্রই এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও