বাকেরগঞ্জে লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তির নাম ডিসি রোড খেয়াঘাট
ডিসেম্বর ২১ ২০২২, ১৬:৪৬
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বাকেরগঞ্জের ভাতশালা গ্রামের রহিম মিয়া তার গুরুতর অসুস্থ বড় ভাইকে বরিশালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ডিসি রোড খেয়া পার হতে গিয়েই পড়েন বিপত্তিতে।
নদীর তীরের কাছাকাছি এসেই চরে আটকে যায় ট্রলার। প্রায় কোমর সমান পানির মধ্যে অসুস্থ বড় ভাইকে কোলে তুলে নিয়ে নামতে হয় তাকে।
এরপর বিপদ আরো বেড়ে যায়। প্রায় আধা কিলোমিটার কাদামাটির চরের মধ্য দিয়ে বড় ভাইকে কোলে নিয়ে হেটে রাস্তায় উঠতে হয় তাকে।
ঝালকাঠির কর্মস্থল থেকে স্ত্রী আর ছোট বাচ্চাকে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ডিসি রোড খেয়াঘাটে পৌঁছান বাদল তালুকদার, তার গন্তব্য বাউফল উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের চাঁদকাঠি নিজ গ্রাম।
নদীতে ভাটা থাকায় সকাল থেকে দুপুর অব্দি প্রায় ৪ ঘণ্টা জোয়ারের অপেক্ষায় মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাকে।
এরপর কয়েকজনের সহায়তায় প্রায় ৩০০মিটার কাদামাটির চরের মধ্য দিয়ে মোটরসাইকেলটি ট্রলারে উঠানো হয়। এরকম ঘটনা বাকেরগঞ্জ ডিসি রোড খেয়াঘাটের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কম থাকায় চরের মধ্যকার খালটি শুকিয়ে যায়, প্রায় আধা কিলোমিটার কাদামাটির চর পেরিয়েও অনেকসময় রক্ষা হয় না। ডুবোচর থাকায় হাটুসমান পানির মধ্যেই ট্রলারে ওঠানামা করতে হয় যাত্রীদের।
বাকেরগঞ্জের ফরিদপুর ও দূর্গাপাশা ইউনিয়ন, বাউফলের কালিশুরি, ধুলিয়া, কেশবপুর, সূর্যমনি, নূরাইনপুর, কনকদিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ সদরের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই ডিসি খেয়াঘাট।
গত কয়েক বছর চরের মধ্য দিয়ে নদীর পাড় পর্যন্ত কাঠের পুল দিয়ে মানুষের হাটার ব্যবস্থা করা হলেও গত বছর এবং চলতি বছর তা নির্মাণ করা হয়নি।
প্রতিদিন প্রায় ২ সহস্রাধিক মানুষকে কাদা মাটির চর পেরিয়ে হাটু সমান পানির মধ্যে নেমে পাড়ি দিতে হয় এই খেয়া।
এছাড়া ফরিদপুর ইউনিয়নের কাকরধা কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্র থাকায় অপর পাড়ের পাঁচটি কলেজের এইচএসসি ও ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের এই ঘাট দিয়ে মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পারাপার হতে হয়।
হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো: নুর দারাজ বলেন, এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তির নাম ডিসি রোড খেয়াঘাট।
যা চরের মধ্যকার খাল ও ডুবোচর ড্রেজিং অথবা চরের মধ্যে স্থায়ী পুল নির্মাণের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।ডিসি রোড খেয়াঘাটের ইজারাদার হারুন খান বলেন, চরের মধ্যকার খালটি ড্রেজিং করা হলে পুনরায় কিছু দিনের মধ্যে বালুতে ভরে যায়।
এখানে স্থায়ী ব্রিজ/পুল নির্মাণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলা হয়েছে।তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান ঠিকাদার।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবুল খায়ের মিয়া বলেন, ডিসি রোড খেয়াঘাটে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে ইতোপূর্বে একাধিকবার প্রজেক্ট দেয়া হয়েছে। যা অর্থায়নের অভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
চরের উপর প্রায় ৫০০ মিটার আয়রন ব্রিজ নির্মাণের জন্য এ বছর পুনরায় প্রজেক্ট জমা দেয়া হয়েছে, যাতে এক কোটি টাকার উপর খরচ হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, ইতোপূর্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল। যা দিয়ে চরের উপর প্রায় ৫০০ মিটার আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না।
এ বছর এলজিইডির মাধ্যমে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো প্রাক্কলন ধরে মন্ত্রণালয়ে প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই প্রকল্পটি পাশ হবে।
আ/ মাহাদী








































