প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যে দূষিত তুলাতলী নদী
ডিসেম্বর ১৯ ২০২২, ১৮:৩৩
জিয়াউল হক, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র থেকে বয়ে গেছে তুলাতলী নদী। বাংলাদেশের সবচেয়ে নদীবহুল উপজেলা বাকেরগঞ্জ। ১০ টি নদী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর তুলাতলী নদীর সাথে এই উপজেলার শ্রীমন্ত, কারখানা, তেতুলিয়া, বিষখালী, পায়রা,পান্ডব, গোমা, রাঙ্গাবালিয়া ও খয়রাবাদ নদীর সাথে প্রতিদিন জোয়ার ভাটা চলে। এই তুলাতলী নদীর কোন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বাকেরগঞ্জ বন্দর উপজেলা শহর।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ বন্দরের পুরাতন লঞ্চঘাট টার্মিনালের পাশে তুলাতলী নদীতে পলিথিন, আশেপাশের বাড়ির ঘরের ময়লা-আবর্জনা, বন্দরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লার ভাগাড় ও ঔষধের বোতল, প্যাক, সুইসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ-বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এবং অতিরিক্ত সব বর্জ্যই লঞ্চঘাট টার্মিনালের পাশ থেকে নদীতে ফেলা হয়। এসকল বর্জ্যে তুলাতলী নদী দূষণের পাশাপাশি বায়ু দূষণও হচ্ছে। এবং এই দূষণ তুলাতলী নদী থেকে শুরু করে পুরো উপজেলার বিভিন্ন নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে।
একসময় তুলাতলী নদীই ছিল বাকেরগঞ্জের প্রাণ। এ নদী দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মালামাল আনায়ন করা হতো। তবে দিন দিন নদীটি নাব্যতা হারাচ্ছে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, তখন এ নদীতে সারা বছর মানুষ গোসল, নামাজের জন্য ওজু, নৌকা চালাচল করতো। এখনো বন্দরের শত শত পরিবারের লোকজন নদীতে গোসল করেন। একসময় নদীতে মাছ পাওয়া যেত অনেক। সেই টলমল পানি এখন নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মূলত জনসাধারণের অসচেতনতার জন্যই প্রতিনিয়ত টার্মিনালের পাশ থেকেই নিক্ষেপ করেন বর্জ্য। প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে মাছ পাওয়া যায় না। বরং উল্টো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দিন কাটায় নদীপাড়ে বসবাসরত হাজারো মানুষ। এছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবহেলা আর গাফিলতির কারণে নদীতে দূষণ ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার। কোথাও রাস্তার ধারে পড়ে আছে প্লাস্টিকের বোতল, কোথাও পলিথিন বর্জ কোথাও নর্দমায় ভাসছে। বাজারও সয়লাব পলিথিনে। আইন থাকলেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। উল্টো দিন দিন বাড়ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার। এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রয়েছে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ঘাটতি। ফলে স্থলে পড়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য নষ্ট করছে মাটির গঠন। নদী থেকে মাছের পেটেও যাচ্ছে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ ও প্রকৃতি।
বাকেরগঞ্জ বন্দরের ব্যাবসায়ি মাহবুব জানান, আমরা ছোট বেলা থেকেই এই নদীতে গোসল করেছি। রান্নার কাজ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে তুলাতলী নদীর পানি ব্যাবহারিত হত ৫ বছর আগেও। এখনো বন্দরের শত শত পরিবার এই পানিতে গোসল করছে। তবে এখন বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নদীর পানি ব্যবহার করে। সরকারি সংস্থা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে না পারেন তাহলে ভবিষ্যতে চরম ঝুঁকিতে পরবে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, পৌর এলাকায় ময়লা, আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। এবং বন্দরে বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের ড্রাম রাখা হয়েছে ময়লা ফালানোর জন্য। তবে কে বা কাহারা রাতের অন্ধকারে নদীতে ময়লা, আবর্জনা ফেলে তা আমাদের জানানেই। তবে নদী দূষণমুক্ত রাখা আমাদের সকলের উচিত। পৌর এলাকায় নিদিষ্ট স্থানের ময়লা, আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয়। আমরা সকলে সচেতন হলেই নদী দুষন থেকে মুক্ত হবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল চন্দ্র শীল জানান, নদীতে ময়লা ফালানোর বিষয়টা আমি পৌরসভাকে জানাবো। এবং আমরাও উদ্যোগ গ্রহন করবো। নদীতে যেন ময়লা ফেলানো না হয়। নদী দূষণমুক্ত রাখতে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।








































