নগরীর চাঁদমারি খেয়াঘাট
নিরাপদ স্থান রেখে অনিরাপদ স্থানে যেতে নারাজ যাত্রীরা!
মে ২০ ২০২৫, ২২:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ যুগের পর যুগ ধরে নৌকায় যাতায়তের বাহন হিসেবে মাঝিদের হাক-ডাকে মুখর রয়েছে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পাড় সংলগ্ন চাঁদমারি খেয়াঘাটটি। কাক ডাকা ভোর থেকে নদীর দুই তীরেই নৌকা নিয়ে হাজির থাকতেন মাঝিরা। যাত্রী তুলে ভাটিয়ালি ও মুরশীদি গান গেয়ে পাল তোলা নৌকার যাত্রী তুলেন মাঝিরা।
তবে নৌকা পারাপার হওয়া যাত্রীদের চলাচলের কথা ভেবে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভালো না থাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ অধীনে থাকা চাঁদমারী খেয়াঘাটটি স্থান পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে খেয়াঘাটের স্থান পরিবর্তনের কথা শুনে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের দাবি কয়েক যুগ ধরে খেয়াঘাটটি যে স্থানে রয়েছে সেখানেই রাখা হোক এমনটাই দাবি সদর উপজেলাবাসীর।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অসংখ্য নদী-নালা-খাল-বিল নিয়ে গঠিত বরিশাল সদর উপজেলা। উপজেলাটি অর্থনীতিতে এ নদীগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। তার মধ্যে রয়েছে চাঁদমারী খেয়াঘাটের ইজারার অর্থও।
বরিশাল শহরের সাথে সদর উপজেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো চরকাউয়া ও চাঁদমারী খেয়াঘাট। প্রতিদিন এই দুই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে কয়েক হাজার মানুষ।
এক সময় কাঠের নৌকা চললেও বর্তমানে যাত্রীসহ মালামাল পারাপার করা হয় ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে। কীর্তনখোলা নদী দিয়ে খেয়া পারাপার করেই চলে মাঝিদের জীবীকার। তাই নৌকার মাঝি ও যাত্রীদের সুবিধাস্বার্থে বর্তমানে খেয়াঘাটটি যে স্থানে রয়েছে সেখানেই তাদের চলাচলের জন্য নিরাপদ বলে মনে করেন তারা।
নতুন যে স্থানে খেয়াঘাট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটাকে চলাচলের জন্য অনিরাপদ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে পুরানো স্থানে খেয়াঘাটটি রাখার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ উপজেলাবাসী।
বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন জানান, আমি তালুকদার হাট সংলগ্ন গ্রাম আমার বাড়ি। আমি প্রতিদিনই চাঁদমারি খেয়াঘাট থেকে খেয়া পারাপাড় হয়ে কলেজে আসা যাওয়া করে থাকি। আমি মনে করি পুরানো চাঁদমারি খেয়াঘাটটি আমার কাছে যে রকমের নিরাপদ। অনন্য শিক্ষার্থীদের কাছেও তেমন নিরাপদ। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি চাঁদমারি খেয়াঘাট পুরানো জায়গাতেই রাখা হোক। তাই সংশ্লষ্টি কর্তৃপক্ষের কাছে একটা দাবি আমারা নিরাপদ স্থানেই থাকতে চাই। অনিরাপদ স্থানে গিয়ে বিপদে পড়তে চাই না।
সদর উপজেলার কর্নকাঠি সংলগ্ন চরআইচা গ্রামের বাসিন্দা কহিনুর বেগম বলেন, আমি ছোট থেকে এখান থেকে আসা যাওয়া করে আসছি। ১০ পয়সা ভাড়া থেকে ১০ টাকা ভাড়া হয়েছে তার পরেও এখান থেকে আসা যাওয়া করি এখনও। আমাদের কাছে পুরানো খেয়াঘাটই নিরাপদ।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বলেন, আমাদের ঘাট যে স্থানে রয়েছে সেখানে থাকলেই ভালো হয়। কারন নতুন যে স্থানে ঘাট নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে সেটা বস্তি এলাকা। ওখানে মাদক বেচা-কেনা চলে প্রকাশে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ওখান থেকে স্কুল কলেজে যেতে হলে বখাটেদের হাতে ইভটিজিং এর শিকার হতে হবে। সে কারনেই নতুন স্থান বাদ দিয়ে পুরানো জায়গায়ই খেয়াঘাটটি রাখা হোক।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল নদী বন্দরের উপ-পরিচালক সেলিম রেজা, যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই ঘাটটি স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ওখানে মূলক কার্গো ঘাট তাই কার্গোর পাশাপাশি খেয়াঘাট থাকলে দূর্ঘটনার শিকার হতে পারে তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই স্থান পরির্বতন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগের জায়গায় থেকে যাত্রীদের চলাচল করতে দূর্ভোগ পোহাতে হতো। তাই তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই খেয়াঘাট স্থান পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে যাত্রীরা যখন স্থান পরির্বতন চাচ্ছে না তখন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
বরিশাল
২০-০৫-২৫







































