বছরজুড়ে দক্ষিণাঞ্চলে ৬০ হত্যাকাণ্ড, বেশ কয়েকটি ঘটনা আলোচিত
ডিসেম্বর ২৮ ২০২২, ১৯:১১
ডেস্ক প্রতিবেদক ॥ বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল আরও একটি বছর। অর্থাৎ ইংরেজি ২০২২ সালকে বিদায় জানিয়ে আগামী শনিবার রাতেই বরণ করা হবে ২০২৩। বরাবরের মতো বিদায়ী বছরটিতে আলোচনা ছিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৬০টি। যার মধ্যে ভোলায় রাজনৈতিক সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বিএনপির দুই নেতা নিহত, বাবুগঞ্জে গৃহবধূর গলাকাটা লাশ, বাকেরগঞ্জে পুত্রবধূর হাতে শাশুড়ী এবং বরিশাল নগরীতে স্ত্রীর হাতে স্বামী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো বেশ আলোচিত।
এছাড়া দুই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে।
যদিও বিদায়ী বছরটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পারিবারিক, রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার, জমি নিয়ে বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা আর নির্বাচনী সহিংসতায়। এসব ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দৈনিক মতবাদের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ‘২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল মহানগরসহ বিভাগের ৬ জেলায় মোট ৫৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যার মধ্যে শুধু জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। জানুয়ারিতে ৮ জন নিহত হয়েছে।
বছরের প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে বরগুনার বেতাগীতে। ২ জানুয়ারি জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বৃদ্ধ ধলু মৃধাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া বিদায়ী বছরে বরিশাল সিটি এলাকায় প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে ২৭ জানুয়ারি। ওইদিন নগরীর বাঘিয়া এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র কওে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন কাঠমিস্ত্রি দিপু হাওলাদার। ঘটনার সময় অভিযুক্ত কুডু নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।
এছাড়া ১৩ জানুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জে মরিয়ম বেগম নামের এক নারীকে গণধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় সন্ধ্যা নদীতে। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৫ জানুয়ারি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় চাচাতো ভাইয়ের হামলায় খোকন চন্দ্র শীল নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়। ২০ জানুয়ারি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দাম্পত্ত কলহের জের ধরে রাশিদা বেগমকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার পরে মৃতদেহ মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয় স্বামী তামিম শেখ।
এছাড়া ২৫ জানুয়ারি ভোলার লালমোহনে মেঘনা নদীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে আজগর আলী নামের এক জেলেকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ২৭ জানুয়ারি ছাগলে ধানের চাড়া খাওয়ায় হিজলা উপজেলায় কাঞ্চন রাঢ়ী নামের এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৩০ জানুয়ারি একই উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের ছয়গ্রাও গ্রামে পল্লী চিকিৎসক মিলন দপ্তরিকে হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ।
অপরদিকে, ফেব্রুয়ারি মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২টি। দুটি ঘটনাই ছিল আলোচিত। এরমধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কমলাপুর গ্রামে ৪৫ দিনের শিশু কন্যা রুকাইয়াকে হত্যার পরে মৃতদেহ পুকুরের পানিতে নিক্ষেপ করে তার মা সিমা বেগম। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত সিমা বেগমকে। ৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর রূপাতলী রেডিও সেন্টার সংলগ্ন পরিত্যাক্ত জমি থেকে ইয়াসিন নামের ৯ বছরের এক শিশুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, পারিবারিক দ্বন্দ্বে শিশুটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখে তারই স্বজনরা।
মার্চে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১টি। ১৫ মার্চ মঠবাড়িয়ায় পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় আয়েশা আক্তার নামের তিন সন্তানের জননীকে হাতুড়ি পেটা করে খুন করে স্বামী মামুন।
কিন্তু এপ্রিল মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটে ৭টি। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল বরিশাল নগরীর কাশিপুর ফিসারি রোড এলাকায় চাঁদা না দেওয়ায় ইটের আঘাতে আফিয়া খাতুন নামের এক নারীকে হত্যা করা হয়। পরদিন ৫ এপ্রিল মুলাদী উপজেলার গাছুয়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে হত্যার অভিযোগ ওঠে স্বামী মনিরের বিরুদ্ধে।
৯ এপ্রিল মাত্র চারশ’ টাকা বকেয়া হোটেল ভাড়ার জন্য নগরীর রূপাতলী এলাকায় খুন হন মাছ ব্যবসায়ী রুবেল খন্দকার। হত্যার অভিযোগ ওঠে হোটেল স্বাধীনপার্কের ম্যানেজার আনিচুর রহমানের বিরুদ্ধে। ১১ এপ্রিল গৌরনদীর হোসনাবাদে হারুন মৃধা নামের এক ট্রলার মাঝিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
পটুয়াখালীতে ইউসুফ মৃধা নামের এক ব্যক্তিকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে ১৬ এপ্রিল। ২১ এপ্রিল বাকেরগঞ্জ উপজেলার সোনাপুরা গ্রামে রবিউল ইসলাম রনি মোল্লা নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। তাছাড়া ২৯ এপ্রিল মুলাদী উপজেলায় ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে নাতি জিসানকে পিটিয়ে হত্যা করে তার নানা কাছেম হাওলাদার।
মে মাসে ৭টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৬ মে মঠবাড়িয়ায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের ধারালো অস্ত্রের কোপে দুলাল মিয়া নামের এক যুবক নিহত হয়। ১১ মে বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে ঘুমন্ত শাশুড়িয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পুত্রবধূ নাজনীন বেগম। ১৭ মে পিরোজপুরের সিআইপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে শ্বাসরোধে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমির খসরুর বৃদ্ধ মা সেতারা হালিম। ২৪ মে মুলাদীতে মনির হাওলাদার নামের এক যুবককে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে পুলিশ।
২৭ মে বরিশাল সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ছোট রাজাপুর গ্রামে অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় শিশু কন্যা তন্বী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মা ও তার পরকীয়া প্রেমিক। একই দিন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ডিভোর্স দেয়া স্ত্রী ইতি আক্তারকে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে সাবেক স্বামী আব্দুল জলিল।
এছাড়া ৩১ মে উজিরপুরে নিখোঁজের চারদিন পরে দীপ্ত নামের আট বছরের এক শিশুর বস্তাবন্দী লাশ ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মায়ের পরকীয়া প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
জুন মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটে ৬টি। এর মধ্যে প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটে ৫ জুন নলছিটি উপজেলায়। মেসকাত তালুকদার নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে তার বড়ভাই মেহেদী হাসান। ৬ জুন পারিবারিক বিরোধের জের ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে প্রদীপ নামের এক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। ৭ জুন বিয়ে না করানোয় বৃদ্ধ বাবা নিরঞ্জন চন্দ্র শীলকে হত্যা করে ছেলে নেপাল চন্দ্র শীল। ৮ জুন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না গ্রামে মোবাইল চুরির অপবাদে নাজমুল ইসলাম নাইম নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৬ জুন নলছিটি উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের পোনাবালিয়া বাজারে স্বামী নরসুন্দর পঙ্কজ চন্দ্র শীলকে হত্যা করে হাত-বা বেধে লাশ খালে ফেলে দেয় স্ত্রী সোনালী শীল। ১৬ জুন বাবুগঞ্জ উপজেলায় পারবারিক কলহের জেরে স্ত্রী মাহমুদা বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করে স্বামী মো. নান্টু সিকদার।
জুলাই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৯টি। এর মধ্যে ৯ জুলাই স্বরূপকাঠির গগন গ্রামে কর্মকার পট্টি এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় হাসান বেপারী নামের এক লঞ্চ কর্মচারী নিহত হন। ১৩ জুলাই গভীর রাতে ভোলার আলী নগরে ওবায়দুল হক নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৬ জুলাই একই জেলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাওনা টাকা টানা নিয়ে দ্বন্দ্বে মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেককে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। ১৮ জুলাই বরগুনার বেগাগী এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা খাশ মহেশপুর এলাকায় সাইম নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯ জুলাই পটুয়াখালীর বাউফলে ইউপি নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত বৃদ্ধ আমির হোসেন মৃধার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম মহসীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৬ জুলাই গলাচিপা উপজেলার চরকাজলে জমি নিয়ে বিরোধে মো. নুরু খান নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সবশেষ ৩১ জুলাই পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আবু সালেহ্ নামের এক দিনমজুরকে হত্যাকে রান্না ঘরে লাশ ফেলে পালিয়ে যান স্ত্রী কোকিলা বেগম। একইদিন ভোলায় বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন। এসময় গুলিবিদ্ধ জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলমের মৃত্যু হয় ৩ আগস্ট। যে ঘটনাটি দেশব্যাপি আলোচিত।
আগস্ট মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটে ৪টি। এর মধ্যে ৪ আগস্ট বরিশালের মুলাদীতে আখিনুর নামের এক কিশোরী স্কুল ছাত্রীকে চোখ উপড়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল একটি আলোচিত ঘটনা। ৭ আগস্ট পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় পরকীয়ার জেরে শাম্মী আক্তার নামের এক বিউটিশিয়ানকে হত্যা করে স্বামী সিরাজুল সালেকিন। ১৬ আগস্ট বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধে শ্যালকের শাবলের আঘাতে দুলাভাই কেতাব আলী সরদার নিহত হন। ২৮ আগস্ট নগরীর রসুলপুর এলাকায় শাহ্ আলম নামের এক অটোরিকশা চালককে পাওনা টাকার জন্য মারধরে করে ৯নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুজন খান ও তার সহযোগিরা। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে শাহ্ আলমের মৃত্যু হয়।
সেপ্টেম্বর মাসে চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের রামেরকাঠি গ্রামে বড় ভাইয়ের লাঠির আঘাতে ছোটভাই হীরালাল বৈদ্য নিহত হন। একইদিন রাতে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্টি গ্রামে ২০ হাজার টাকা যৌতুক না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সমাপ্তি বিশ্বাসকে হত্যা করে স্বামী অসীম সোম। ২৪ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চিংড়াখালী এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বড়ভাই ফিরোজ আলমকে কুপিয়ে হত্যা করে ছোটভাই রুহুল আমিন।
এছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নে বংকুরা গ্রামে ছাগলের জন্য ঘাস কাটাকে কেন্দ্র করে শুকরন বিবি নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
অক্টোবর মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৪টি। এরমধ্যে ৭ অক্টোবর ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ফয়রা গ্রামে কবির হোসেন নামের এক যুবককে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ১৬ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আলাউদ্দিন মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
৩১ অক্টোবর পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মামুন হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একইদিন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কাউখালীর ৩ নম্বর রামনা ইউনিয়নের গোলাঘাটা কড়ইতলা গ্রামে চাচা ইউসুফ আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে ভাতিজা রাহাত।
নভেম্বর মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে পাঁচটি। এর মধ্যে নগরী এবং বাবুগঞ্জে দুটি হত্যার ঘটনা আলোচিত। ১৪ নভেম্বর কাঁঠালিয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বড়ভাই নুরু হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করে ছোটভাই বেল্লাল হাওলাদার। ২২ নভেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামে যুবদল নেতা মিলন খানের স্ত্রী মারুফা বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করে দৃর্বৃত্তরা। এসময় মিলন খানকেও কুপিয়ে জখম করা হয় বলে দাবি পরিবারের। এই ঘটনায় স্বামী মিলনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে নিহতের বাবা। তবে ঘটনার মাস অতিবাহিত হলেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে ডাকাতির সময় বাধা দেয়ায় ওই গ্রহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
২৯ নভেম্বর নগরীর পলাশপুর বউ বাজার এলাকায় অর্ধপক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ শেখ ইকবাল কবিরকে কুপিয়ে হত্যা করে স্ত্রী জাফরিন আরা পপি। সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একইদিন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর ইউনিয়নের শিকদারের চর এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বকুলি বেগম নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে গৃহবধূ হালিমা বেগমকে হত্যা করে স্বামী রাকিব মুন্সি।
এদিকে, ডিসেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত ৩টি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭ ডিসেম্বর ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের চেউয়াখালি গ্রামে বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সমর্থন নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় হৃদয় নামের এক যুবক নিহত হয়। হৃদয় ছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থক।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের ছোনখোলা গ্রামে ইয়াসমিন আক্তার ডলি নামের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ২২ ডিসেম্বর মঠবাড়িয়ায় তন্বী আক্তার নামের এক গৃহবধূকে গলাকেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২৪ ডিসেম্বর বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ গুদিঘাটা গ্রামে ধানক্ষেত থেকে আ. রহিম ওরফে আলাউদ্দিন নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ‘সামাজিক অস্থিরতার কারণেই হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বোচ্চার থাকলে এমন ঘটনা আরো কম হতো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবির মাহমুদ বলেন, ‘প্রকৃত শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পূর্ব বিরোধ এবং হতাশা থেকে খুনের মতো সামাজিক অপরাধগুলো ঘটে থাকে। এসব বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘পারিবারিকভাবে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক হলে লাশ ময়না তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া রাজনৈতিক বা অন্য কোন কারণে হত্যার ঘটনা ঘটে থাকলে সেগুলো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সবসময় কাজ করছে।
এদিকে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামের দাবি, ‘বরিশাল নগরীর সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এখানে কিছু অঘটনা ঘটলেও সেটা পুলিশ তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে।
তাছাড়া ঘটনাবহুল বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন ২০২৩ সালটি সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণভাবে কাটবে এমনটাই প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।








































