স্বপ্নের মেট্রোরেল যুগে বাংলাদেশ

ডিসেম্বর ২৮ ২০২২, ১০:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: স্বপ্ন সত্যি করে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের দুয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে খুলছে আজ। সকালে উত্তরায় উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকেট কেটে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলে চড়ে অফিসে যাবেন।

এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে আরেকটি উন্নয়নের মাইলফলক অতিক্রম করবে লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত (প্রায় ১২ কিলোমিটার) অংশে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগেরও সূচনা হবে।

মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী অবতীর্ণ হবেন রেলের গার্ডের ভূমিকায়। পরে সেই সবুজ পতাকায় নিজের স্বাক্ষরও তিনি রেখে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীই হবেন এ বৈদ্যুতিক ট্রেনের প্রথম যাত্রী। তবে সাধারণ যাত্রী পরিবহন শুরু হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে।

প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এ উড়াল ট্রেন। আপাতত মাঝপথে কোথাও থামবে না। আগামী ২৬ মার্চ থেকে মেট্রোরেল সব স্টেশনে থামবে।

বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা হিসেবে ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে ২০ মিনিটে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।

আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

মেট্রোরেল সূত্র জানিয়েছে, উদ্বোধনের পরের দিন থেকেই চলাচল করবে পাঁচটি ট্রেন। প্রতিটি ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ছয়টি করে কোচ থাকবে। পরে আরও দুটি কোচ যোগ করে প্রতি ট্রেনে কোচের সংখ্যা আটটিতে উন্নীত করা হবে।

প্রতিটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি মোটরকার কোচে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে ৬ কোচের একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩১৬ জন।

প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। প্রতিটি কোচের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৩৯০ জন। সেই হিসাবে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।

ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চার মিনিট অন্তর ট্রেন চলাচল করার কথা থাকলেও প্রথম দিকে এ নিয়ম মানা হবে না।

মেট্রোরেলে জনবল নিয়োগ পুরোপুরি শেষ হয়নি এবং ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত সবার প্রশিক্ষণও সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে আপাতত কয়েক দিনের জন্য সকাল ৮টা থেকে ৪ ঘণ্টা করে চলাচল করবে। শুরুর দিকে স্টেশনে যাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য ১০ মিনিট করে থেমে থাকবে ট্রেন।

এর উদ্দেশ্য যাত্রীদের অভ্যস্ত করা। ১৫ দিন পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, আপাতত মেট্রোরেলের চলাচল সপ্তাহে এক দিন মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।

মেট্রোরেলে চলাচলকারী যাত্রীদের নিরাপত্তায় স্টেশন ও ট্রেনের কোচ থাকবে ক্লোজড সার্কিট (সিসি ক্যামেরা) ক্যামেরার আওতায়।

মেট্রোরেল সেবার প্রথম ট্রেনটি চালাবেন একজন নারী চালক। এ জন্য ছয় নারী চালককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে মরিয়ম আফিজা উদ্বোধনী দিনই চালকের আসনে বসার প্রস্তুতি শেষ করেছেন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক জানান, মেট্রোরেল উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ট্রেন চালানোর জন্য পর্যাপ্ত চালক নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ছয়জন নারী সদস্যও আছেন, তাদের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে মেট্রোরেল সব স্টেশনে থামবে না। শুরুর স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে ছেড়ে ট্রেনটি আগারগাঁও গিয়ে থামবে। মাঝের স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামানোর কার্যক্রম কয়েক দিন পর শুরু হবে।

মেট্রোরেলে নারী যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কোচ শুধু নারীদের জন্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাইলে নারীরা অন্য যেকোনো কোচেও যাতায়াত করতে পারবেন।

তবে নারীদের কোচে কোনো পুরুষ যাত্রী উঠতে পারবেন না। এ ছাড়া মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তাতে ছোট শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের সুবিধার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সংযোজিত রয়েছে। গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক নারী যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেলের কোচের ভেতরে সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে।

আলাদা আসন থাকছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও। এ ছাড়া রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ, টিকেট সংগ্রহ, সিঁড়ি ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো পর্যন্ত আলাদা ব্যবস্থা হিসেবে লিফট রাখা হয়েছে।

স্টেশনের ডিজিটাল টিকেট কাউন্টারের মেশিনে টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। এ ছাড়া টিকেট সংগ্রহের জন্য আরও দুই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে টপআপ ও মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন।

আর প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি ম্যানুয়াল কাউন্টারও রয়েছে। যাত্রীরা চাইলে এক বা একাধিক ভ্রমণের জন্য টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর উত্তরা এলাকায় উত্তরা স্টেশন হবে মেট্রোরেলের শুরুর স্টেশন। তিনতলা স্টেশন ভবনের ওপরের তলার প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীরা ট্রেনে উঠবেন।

ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতে যাত্রীদের আগে এস্কেলেটর দিয়ে স্টেশনের দ্বিতীয় তলার কনকোর্স হলে প্রবেশ করতে হবে। তবে এস্কেলেটরের পাশাপাশি ওপরে ওঠার জন্য লিফটের ব্যবস্থাও রয়েছে।

প্রতিবন্ধী বা প্রবীণ নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এই সুবিধা রাখা হয়েছে। টিকেট সংগ্রহের পর প্ল্যাটফর্মে ওঠার প্রবেশপথে নির্ধারিত জায়গায় টিকেট পাঞ্চ করে যাত্রীরা দোতলা থেকে নির্ধারিত এস্কেলেটর বা সিঁড়ি দিয়ে মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে যাবেন।

এখানে ট্রেন এসে থামার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যাবে। কিন্তু তখনই যাত্রীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। আগে যাত্রীদের নামতে দিতে হবে তারপরই ওঠার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।
সম
বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল হবে স্বয়ংক্রিয়। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপোতে একটি পরিচালন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থেমে থাকবে, কত গতিতে চলবে এর সবই আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া হবে। স্টেশনে যেখানে ট্রেন থামার কথা, ঠিক সেখানেই থামবে।

সরকার নির্ধারিত মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা।

এ ছাড়া উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা, উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজিপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পুরো রুট চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা।

ডিএমটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কিনতে হবে।

 

মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রেও কার্ডে টাকা ভরা যাবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করে দরজা খুলতে হবে। একইভাবে নেমে যাওয়ার সময়ও কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। যারা প্রতিযাত্রায় টিকেট কিনতে চান তাদের স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

 

এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খোলা যাবে না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে। স্টেশনে টিকেট বিক্রির দুটি কাউন্টার থাকবে যার একটিতে সাধারণ মানুষ টিকেট কিনতে পারবেন। অন্যটিতে কেনার সুযোগ পাবেন শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।

 

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক জানান, স্থায়ী কার্ডের প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ। তাই এ কার্ডে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমেও টাকা ভরার ব্যবস্থা করা হবে।

 

সাধারণ যাত্রীদের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। প্রথমে উত্তরা ও আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকেট কাটা যাবে। তবে টিকেট কাটার আগে সবাইকে নিবন্ধন করে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে। নিবন্ধন করতে নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, ফোন নম্বর ও ই-মেইল লাগবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ‘বাঁচবে সময়, বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’-এ সেøাগানকে সামনে রেখে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার এ প্রকল্প অনুমোদন করে।

তখন মেয়াদকাল ছিল ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৬ জুন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনার কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

আর ৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। চলতি বছরের জুলাইয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়ানো হয়। ব্যয় বাড়ে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে দৈর্ঘ্য বাড়বে ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। মোট ব্যয় গিয়ে ঠেকছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায়। নির্মাণকাজের উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর আজ বুধবার মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, ১২টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হলেও শুরুতে ১০টিতে সরাসরি যাত্রী পরিবহন করা হবে।

বাকি দুটি যেকোনো সময়ে চলাচলের জন্য ব্যাকআপ হিসেবে ডিপোতে প্রস্তুত থাকবে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশেও উদ্বোধনের পর প্রথম দিন থেকেই মেট্রোরেলে পরিপূর্ণভাবে যাত্রী পরিবহন করা হয় না। তাই শুরুতে কয়েক মাস কম যাত্রী পরিবহন করা হবে।

পরবর্তী ২-৩ মাসের মধ্যে শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। নিরাপত্তা ও নানা আনুষ্ঠানিকতার কারণে উদ্বোধনের দিন নির্ধারিত অতিথিদের বাইরে সাধারণ যাত্রীদের মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ থাকছে না বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল লাইন-৬ পুরোপুরি চালু হলে দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।

অবশ্য মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে ২০২৫ সাল লেগে যেতে পারে।

এদিকে মেট্রোরেলের যাতায়াতে নতুন মাত্রা যোগ করবে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) হাব। এ সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে ডিএমটিসিএল। যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ডের মতো উন্নত দেশের আদলে মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন টিওডিতে থাকবে বহুতলবিশিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত গাড়ি রেখে মেট্রোতে ভ্রমণ করতে পারবেন যাত্রীরা। এতে শহরে কমবে গাড়ির চাপ। পার্কিং ছাড়াও বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে এসব টিওডিতে থাকবে বিপণিবিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিকভাবে উত্তরা ও গাবতলী এলাকায় দুটি টিওডি নির্মাণ করা হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ডিএমটিসিএলের অধীনে ছয়টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। যাতে রাজধানীজুড়ে ১২৯ দশমিক ৯০১ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে এলিভেটেড লাইন হবে ৬৮ দশমিক ৭২৯ কিলোমিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন হবে ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার। রাজধানীজুড়ে থাকবে ১০৫টি স্টেশন। এর মধ্যে ৫২টি থাকবে ওপরে এবং ৫৩টি থাকবে পাতালে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, উত্তরা উত্তর স্টেশনের পাশে টিওডি নির্মিত হবে। আমরা ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পূর্ণ করেছি। বর্তমানে টিওডির নকশার কাজ চলমান। টিওডি নির্মাণের ফলে নগরীতে গাড়ির চাপ থাকবে না। মেট্রোরেলকেন্দ্রিক একটা পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে টিওডির কোনো বিকল্প নেই। মেট্রোরেল থেকে নেমেই যাত্রীরা টিওডি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারবেন।

মেট্রোরেলের জন্য আমদানি করা হচ্ছে ২৪টি ট্রেন সেট। এর মধ্যে ২১টি ট্রেন সেট দেশে পৌঁছেছে। আর ১৯টি ট্রেন সেট ইতিমধ্যে ঢাকার উত্তরাস্থ ডিপোতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। বাকি ২০ ও ২১তম ট্রেন সেট জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে গত ২৭ নভেম্বর মোংলা সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছেছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মেট্রোরেলের উদ্বোধন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের মেট্রোরেল শুভ উদ্বোধন দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে একটি অনন্য মাইলফলক। এর মাধ্যমে জনবান্ধব সরকারের আরেকটি সাফল্য অর্জিত হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বাংলাদেশের গর্ব ও আকাক্সক্ষার প্রতীক মেট্রোরেল বাংলাদেশের নগর গণপরিবহন ব্যবস্থায় একটি অনন্য মাইলফলক এবং ঢাকা মহানগরবাসীর বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের উন্নয়ন যাত্রার সূচনা করেছিলেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগব্যবস্থাকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও