আসছে নির্বাচনী বড় বাজেট
ডিসেম্বর ২১ ২০২২, ১৩:১০
ডেস্ক প্রতিবেদক: বৈশ্বিক সংকটের কারণে অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্যে আরেকটি বড় বাজেট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। মূলত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেট সাজাতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গতকাল সচিবালয়ে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও দেশের বর্তমান বাস্তবতাকে মাথায় রেখে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি ও চলতি অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরেন বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা। অর্থনীতিতে এখন চার চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন তারা। এগুলো হলো: উচ্চমূল্যস্ফীতি, মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিরতা, প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স ও ভর্তুকির চাপ।
এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা যায় সে জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
এ বছর মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে এই হার অনেক বেশি। এটি ৮ শতাংশের ওপরে ছাড়িয়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। ফলে আগামী বছরও উচ্চমূল্যস্ফীতির প্রবণতা বজায় থাককে। সে জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজস্ব আয় প্রত্যাশিত হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের বিশেষ করে নির্ধারিত আয়ের লোকদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এতে করে কমে গেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা। এ অবস্থায় আগামীতে সংকোচনমুখী বাজেট করা যেতে পারে।
সূত্র বলেছে, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বাজেটটি হবে এই সরকারের শেষ বাজেট। কাজেই, আসন্ন বাজেটটি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে নির্বাচনের প্রতিফলন থাকে। কারণ শেষ সময় নিবা আসনে উন্নয়ন কাজের চাহিদা বাড়ে। ফলে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
বৈঠকের একটি সূত্র বলেছে, আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এর আকার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ কমানো হতে পারে। আগামী এপ্রিলে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির সংকট সহসাই যাচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সার ও জ্বালানি তেলের দাম খুব একটা কমছে না। এতে করে দেশের মধ্যে এই দুটি পণ্যে ভতুর্কির চাহিদা আরও বাড়বে। এ ছাড়া বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় এ খাতেও ভর্তুকি বাড়ছে। সব মিলে আগামী অর্থবছরও ভর্তুকির চাপ অব্যাহত থাকছে।
চলতি অর্থবছরে মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় ভর্তুকি খাতে। সূত্র বলেছে, আগামী বছরে এটি ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বড় বাজেট করার প্রস্তাব করা হলেও আগামী বাজেটে ঘাটতি চলতি বছরের মতো ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী প্রত্যাশা করছেন, আগামী বছর নাগাদ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্বাভাবিক হবে। ফলে দেশের অর্থনীতির গতি ফিরে আসবে। যে কারণে আগামী বছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরের মতো সাড়ে ৭ শতাংশ প্রাক্কলনের কথা বলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী বছরও মূল্যস্ফীতি উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে নতুন অর্থবছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
যোগাযোগ করা হলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এবার যুদ্ধাবস্থার মধ্য দিয়ে নতুন বাজেট করতে হচ্ছে। যুদ্ধ সব দেশকেই কমবেশি প্রভাবিত করেছে। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি এক নম্বর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। জিডিপির প্রবৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ প্রবৃদ্ধি কমলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রেখে নতুন বাজেট করার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, আবার ব্যয়ও কমানো যাবে না। এসব বিবেচনা করে কৌশলপূর্ণ একটি বাজেট করতে হবে।









































