বরিশাল সদর আসন সরগরম
চমকের অপেক্ষায় জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন, চ্যালেঞ্জে বিএনপি
অক্টোবর ০৭ ২০২৫, ১৪:০৭
আরিফ হোসেন : একসময় বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় কোন্দল, বিভক্তি ও প্রার্থী নির্ধারণে বিলম্ব সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি।
- বিএনপি: ইতিহাসে জয়ের রেকর্ড বেশি, তবে এখন বিভক্ত ও পিছিয়ে প্রচারে
- জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন: সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়, নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছে
- আওয়ামী লীগ: এখনো নীরব, তবে রিজার্ভ ভোট রয়েছে শক্ত অবস্থানে
মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরে একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনসহ অন্তত ৬ জন নেতাই সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ফলে, বিভক্তি আরও জটিল আকার নিয়েছে। মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারও নিজ পরিবার থেকে প্রার্থী চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
তাদের বিপরীতে জামায়াত প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল।
একইভাবে চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে মাঠে রয়েছেন। তারা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রভিত্তিক সভা, লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগে ব্যাপকভাবে সক্রিয়।
পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে ১০টি সাধারণ ও উপ-নির্বাচনে বিএনপি ৮ বার জয়ী হয়। মজিবর রহমান সরোয়ার একাই চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন।
সর্বশেষ নির্বাচনে (২০০৮) মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পান তিনি। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন মাঠে নেমে সংগঠন গড়ার চেয়ে অধিকাংশ বিএনপি নেতাই দলীয় বলয় রক্ষায় ব্যস্ত।
বিএনপির কোন্দল প্রসঙ্গে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, “বড় দলে বিভক্তি থাকতেই পারে। কিন্তু মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সবাই একত্রে কাজ করবে।”
একই সুরে কথা বলেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও জিয়া উদ্দিন সিকদার।
তবে মাঠ পর্যায়ে সাধারণ ভোটারদের ধারণা, বিভক্ত দল, নেতাদের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচনি প্রচারে পিছিয়ে পড়া এই সব কিছুর কারণে বিএনপি প্রার্থী যেই হোক, এবার জয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী হেলাল জানান, “মানুষ প্রকৃত পরিবর্তন চায়। আমাদের নেতা-কর্মীরা জুলুম সহ্য করেও মাঠে নেমেছে। এবার দাঁড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।”
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীও সক্রিয় প্রচারে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৪ হাজারের বেশি ভোট পাওয়াকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
ভোটের হিসাবে, বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির ‘রিজার্ভ ভোট’ রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার, আওয়ামী লীগের ৩৫ হাজার, আর জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সম্মিলিত ভোট প্রায় ৫০ হাজার। এর বাইরে নতুন তরুণ ভোটাররা এবার ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সবমিলিয়ে বরিশাল-৫ আসনে একটি ত্রিমুখী নির্বাচনী প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে বিএনপির দলীয় বিভক্তি, জামায়াত-চরমোনাইয়ের সংগঠিত প্রচার এবং আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোটের নীরব অবস্থান—যা এবারের নির্বাচনে নাটকীয় ফলাফলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।







































