ভরা মৌসুমেও উপকূলীয় জেলা বরগুনা ইলিশ শূন্য
সেপ্টেম্বর ১৬ ২০২৫, ১৩:৫২
বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা: সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনা ইলিশের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত হলেও ভরা মৌসুমেও এখানে ইলিশ শূন্যের মতো দেখা যাচ্ছে। সামান্য কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও দাম আকাশছোঁয়া, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এ পরিস্থিতিতে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরাই সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন।
প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিলিত হওয়া পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী থেকে লক্ষাধিক মেট্রিকটন ইলিশ আহরিত হয়। তবে চলতি বছরে আহরণের পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। ঋণগ্রস্ত ও দাদন মৎস্যজীবীরা জীবনযাপন করছেন বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে।
উপকূলীয় বরগুনা থেকে আহৃত ইলিশ বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ জাল, মা ইলিশ নিধন ও নদী দূষণের কারণে বরগুনার নদীগুলোতে ইলিশের সংখ্যা তীব্রভাবে কমে গেছে।
বরগুনার মৎস্য আহরণ পয়েন্ট ও অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, বিষখালী, পায়রা, বলেশ্বর ও আন্ধারমানিক নদীর মোহনা ডুবোচর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গরম পানি এবং পলিথিন বর্জ্যের কারণে ইলিশের বিচরণ বাধাগ্রস্ত। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, ঐতিহ্যবাহী বিষখালীর ইলিশের স্বাদ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনের বরগুনা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মো. মহিউদ্দিন বলেন, “উপকূলীয় নদ-নদীর ইলিশ সংকট মৎস্যজীবী, জেলে ও ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। সরকারের উচিত দ্রুত এ অঞ্চলের নদীর পরিবেশ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া।”
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিষখালী নদীতে ডুবোচর ৬.৮ কিলোমিটার, বলেশ্বর নদীতে ১১.৪২ কিলোমিটার, আন্ধারমানিক নদীতে ১২ কিলোমিটার এবং পায়রা নদীতে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে। জেলেরা জানাচ্ছেন, ডুবোচর না খনন করা হলে ইলিশ নদীতে প্রবেশ করতে পারবে না।
স্থানীয় জেলে আব্দুল সাত্তার ও আব্দুল আজিজ বলেন, প্রতিদিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গরম পানি ও পলিথিন বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে ইলিশ মাছ অভ্যস্ত পরিবেশ হারাচ্ছে, জাল ফেলে মাছের পরিবর্তে শুধু প্লাস্টিক উঠে আসছে। অনেকে জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
বরগুনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮০ হাজার জেলে বরগুনার প্রধান নদীতে ইলিশ আহরণ করেন। মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জেলেদের উপস্থিতিও অর্ধেকের কম হয়ে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন জানান, মোহনা থেকে নদীর প্রবেশপথের গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বরগুনার চারটি নদী খনন করার প্রয়োজন রয়েছে এবং ইতোমধ্যে এ প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।








































