আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই কুয়াকাটায় , হুমকিতে পরিবেশ
সেপ্টেম্বর ০৯ ২০২৫, ২০:২৮
কুয়াকাটা প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর সমুদ্রকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পার হলেও গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। প্রতিদিন পৌর এলাকার বাড়িঘর, হোটেল-রিসোর্ট, হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে আসা ৮০-৯০ টন বর্জ্য শহরের প্রবেশমুখে খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
শহরের প্রবেশপথেই গড়ে উঠেছে বড়সড় ময়লার ভাগাড়। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি কুকুর-শুকরের মৃতদেহও সেখানে ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে পথচারী ও চালকদের নাক চেপে যাতায়াত করতে হয়। পর্যটন শহরের প্রবেশমুখে এমন পরিস্থিতি ঘুরতে আসা পর্যটকদের বিরক্ত করছে।
রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক আলফান ও জেমি বলেন, ‘এভাবে খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি শুধু শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, বরং পর্যটন শিল্পের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
ময়লার ভাগাড়কে কেন্দ্র করে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শতাধিক টোকাই প্রতিদিন স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সেখানে প্লাস্টিক, লোহা ও অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস সংগ্রহ করছে। অনেকে মাসিক বা সাপ্তাহিক বেতনে কাজও করছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন উপরার আহ্বায়ক কে এম বাচ্চু বলেন, ‘নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করে। খাজুরা এলাকায় যেভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, তাতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান অপু জানান, খোলা জায়গায় বর্জ্য রাখলে বাতাসে জীবাণু ছড়িয়ে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ ও এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো সংক্রামক রোগও ছড়াতে পারে। আবর্জনা পোড়ানো হলে ধোঁয়া বায়ুদূষণ ঘটায় ও অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্ট বাড়ায়।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক জানান, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩.৫ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন ও প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার সম্ভব হবে, পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে।
২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত কুয়াকাটা পৌরসভার আয়তন ১২.৭৫ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ২০ হাজার মানুষের এই শহরে এখনো নির্দিষ্ট বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফলে শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরা এলাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।








































