মহাজনের দাদনের কাছে জিম্মি দশমিনার জেলেরা
মে ১৯ ২০২৫, ১৩:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মৎস্য সম্পদ আহরণে নিয়োজিত জেলেদের হাড্ডিসার দেহ দেখে বিশ্বাস হবে না তারাই প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।ঝড়ঝঞ্ঝা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে জীবনবাজি রেখে নদী ও গভীর সমুদ্রে ছুটে যান তারা। তবে তাদের এ শ্রমের ফসল ঘরে তুলছেন মহাজনরা। লাল খাতার মারপ্যাঁচে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওইসব জেলে।
জানা গেছে, দশমিনা উপজেলার প্রায় ২০ শতাংশ লোক মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত। মোট আমিষের ৫ ভাগের ৪ ভাগই আছে মাছে। মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবে যারা আমিষের জোগান দিচ্ছে তারাই অপুষ্টি, নিরক্ষরতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। দাদনের শৃঙ্খলে বন্দি তারা। এখানকার জেলেরা প্রতি বছর কোটি টাকার মাছ ধরে মহাজনদের আড়তে জমা দিয়েও ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার দাদনের দায় থেকে নিষ্কৃতি পায় না।
কয়েক বছর ধরে তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীতে জাটকা নিধন বন্ধ ও মা ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় নদীতে ইলিশ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু দাদনদারদের কারণে জেলেদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। মহাজনের কাছে ইলিশের দৈনিক বাজার মূল্যের থেকে কম মূল্যে ইলিশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন জেলেরা। একদিকে জেলেদের দাম কম দেওয়া হচ্ছে অন্য দিকে ওজনে প্রতি কেজিতে ১শ গ্রাম করে কম দেওয়া হচ্ছে।
জেলেরা জানিয়েছেন, মহাজনদের কাছে দাদনের জালে তারা বাঁধা পড়ে গিয়েছেন। ফলে ইলিশের দাম বাড়লেও মহাজনদের বেঁধে দেওয়া দামেই তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। অল্প সংখ্যক জেলের নিজস্ব ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রলার, জাল থাকলেও বাকিরা মহাজনদের কাছ থেকে নৌকা ও ট্রলার ভাড়া অথবা টাকা নিয়ে নৌকা-ট্রলার তৈরি করে নদীতে মাছ শিকার করতে যায়। এসব জেলেরা মহাজনদের দাদনের জালে জিম্মি হয়ে পড়ছেন।
জেলে আলাউদ্দিন বলেন , বছরের পর বছর ধরে তারা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক জেলেদের কম সুদে ঋণ দিলে তারা আর দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হতেন না। ব্যাংকের ঋণ না পেয়ে মহাজনের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিতে বাধ্য হন তারা। এ ছাড়া জাল, নৌকাও নিতে হয় মহাজনের কাছ থেকে। অনেক সময় নদীতে বেশি মাছ ধরা পরলে এবং বাজারে মাছের দাম চড়া থাকলেও জেলেদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।
উপজেলার আওলিয়াপুর এলাকার রবিউল বলেন, বাজারে এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম ২৫ শ থেকে ২৬ শ টাকা হলেও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয় ১৯ শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, জেলেরা ঋনের দুষ্টচক্রে পড়েছেন ।
তাদের সন্তানরা পড়াশোনা করতে পারে না। অভাবের কারণেই তারা দাদনচক্রে জড়িয়ে পড়ে। যাতে এই চক্র থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে এই জন্য কাজ করছে মৎস অধিদপ্তর। সরকার সামাজিক সুরক্ষা বাড়ালেই তাদের জীবনমান উন্নত হবে।








































