ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটসংলগ্ন বাঁধ যানবাহনের দখলে: লাঞ্ছিত হচ্ছেন যাত্রী ঘটছে দুর্ঘটনা

ডিসেম্বর ১৮ ২০২২, ১৪:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বেপরোয়া বোরাক, অটো আর মাহেন্দ্রের পার্কিংয়ের ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। উপরন্তু সিরিয়ালের নামে চলছে চাঁদাবাজি। নেই কোনো তদারকি। ‘দেখব’ বলেই দায় সারছে প্রশাসন।

গতকাল সরেজমিন ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটে গিয়ে নজরে আসে যাত্রী হয়রানি আর বাঁধের ওপর যানবাহন রাখার দৃশ্য। কথা বলার সাহস পর্যন্ত নেই কারোর।

স্থানীয় কিছু গাড়িচালক আর চাঁদাবাজের প্রতাপে মুখ খোলার সুযোগ নেই। কিছু বলার আগেই তেড়ে আসে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখন বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সাধারণ যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা কিংবা লঞ্চ থেকে নামার কোনো অবস্থা নেই।

গ্রিন লাইনে আসা যাত্রী রোকসানা বিবির কোলে তিন মাসের সন্তান আর হাতে আড়াই থেকে তিন বছরের আরেক সন্তান।

লঞ্চ থেকে নেমে সে বাঁধে উঠবেন সেই অবস্থা নেই। প্রবেশপথ এবং পুরো বাঁধ অটো, বোরাক, মাহেন্দ্র আর মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণে।

তার ওপর চালকদের যাত্রী নেওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে অল্পতে রক্ষা পেল কোলের শিশু। পায়ে হাঁটার মতো কোনো জায়গা ফাঁকা নেই বাঁধের ওপর।

এরই একটু আগে একটি বোরাক বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় উল্টে পড়ে একটি দোকানের ওপর। এভাবে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে এই লঞ্চঘাট এলাকায়।

এদিকে লঞ্চে উঠবেন চরফ্যাশনের আবদুল কাদের নামে এক বৃদ্ধ। তিনি হাতে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসতে পারছেন না বাঁধের ওপর গাড়ির জ্যাম থাকার কারণে।

চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃদ্ধ বলেন, দেশে কি কোনো প্রশাসন নেই এসব অত্যাচার দেখার জন্য? একটি লঞ্চ এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আর চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠে এসব গাড়ির চালক।

যে যেভাবে পারছে যাত্রী এবং তাদের ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। অথচ লঞ্চঘাটে পুলিশের দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও দেখা মেলেনি কারোই।

পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে ইলিশা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের কনস্টেবল মাসুদুরের সঙ্গে দেখা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কিছুই করার নেই। কেউ শোনে না কারও কথা। লাইনম্যান রয়েছে, তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করছে।

লঞ্চঘাটের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মাসুম আর মনির নামের দুজন আছে।

তারাই সিরিয়ালের নামে গাড়িপ্রতি ২০ টাকা করে নিচ্ছে। কিছুই বলা যাচ্ছে না। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটলেও এবং যাত্রী হয়রানি আর লাঞ্ছিত হলেও কিছুই করার থাকে না। তারা অবৈধভাবে টাকা তুলে যা ইচ্ছা তাই করছে।

এদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি। অথচ আগের মতো রাস্তায় গাড়িগুলো সিরিয়াল দিয়ে থাকলে যাত্রীরা সুন্দরভাবে ওঠানামা করতে পারত। একজন রোগী অ্যাম্বুলেন্সে এলে তাকে ঘাটে আনা যায় না।

টাকা তোলার বিষয়ে অভিযুক্ত মো. মনির বলেন, আমি আর মাসুম দুজনে টাকা তুলে থাকি। ২০ টাকা করে নিই। কেউ দেয়, আবার কেউ দেয় না। আমরা সিরিয়াল মেন্টেইন করি।

কোনো বৈধতা বা ইজারা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ইজারা নেই, এমনি টাকা তুলি। আমরা দুজনে ভাগ করে নিই সব।

পরে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখন থেকে যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখব এবং মাঝখানে ফাঁকা রাখব যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে।

এদিকে লঞ্চঘাটে বিশৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজির ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আচ্ছা, আমরা দেখছি কী করা যায়।

আ/ মাহাদী

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও