৫১ বছরেও শেষ হলো না মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই

ডিসেম্বর ১৬ ২০২২, ১২:০৪

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্টে গেছে বীর সেনানীদের নাম। কিন্তু টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই এখনো শেষ করতে পারেনি।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শেষ করার তারিখ নির্ধারণ করা আছে। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপিল শুনানি শেষ করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। ফলে এ বছরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা চূড়ান্ত হচ্ছে না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু আপিল শুনানি বাকি আছে, সেগুলো চলছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল শুনানি শেষ করার তারিখ বেঁধে দেয়া হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই এসব শুনানি শেষ হবে।

মোজাম্মেল হক জানান, যাচাই-বাছাই শেষে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন, ‘তাদের সবাইকে সনদ দেয়া হয়েছে। এদের নাম সমন্বিত তালিকায়ও ওঠানো হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপত্তি এসেছে। আপিলের সুযোগ পাওয়া সবার মৌলিক অধিকার। অনেক আপিল শুনানি শেষ হয়েছে, এখন ১০টি উপজেলার আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে। এসব শুনানি শেষ হলে আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিরূপণ করতে পারব।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন ধাপে যাচাই-বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম সমন্বিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আপিল শুনানি শেষ হলে আরও হাজারখানেক মানুষ মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেতে পারেন। সেই হিসাবে মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি হবে না।

জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিল শুনানি শেষ করতে আমরা চেষ্টা করছি। প্রতিদিনই শুনানি নেয়া হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি নিষ্পত্তি করতে পারব।’

জহুরুল ইসলাম জানান, আপিল শুনানির বাইরেও আদালতে মামলা এবং এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আরেক মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের বিষয়গুলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী নিজে শুনানি করেন। এমন কিছু বিষয় এখনো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১১ ডিসেম্বর শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই দিন শুনানি না নিয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, এখনো যেসব আপিল শুনানির বাকি আছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। ফলে আগামী স্বাধীনতা দিবসের আগে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব আপিল শুনানি শেষ হলে আগামী ২৬ মার্চের আগে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা করা যাবে কি না, তা জানাতে পারেননি জামুকার মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের বৈঠকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর কয়েকজন সচিব, কয়েক শ সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও বেশ কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তার আগে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়।

স্বাধীনতার পর কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার ও সাব-সেক্টর কমান্ডারের প্রকাশিত বইয়ে নিয়মিত বাহিনীর ২৪ হাজার ৮০০ এবং অনিয়মিত বাহিনীর ১ লাখ ৭ হাজারসহ মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরী বিভিন্ন সেক্টরের তথ্য নিয়ে একটি তালিকা ভলিউম আকারে প্রকাশ করেন, যেখানে ৭০ হাজার ৮৯৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করা হয়। বাকি ৬০ হাজার ৯০৪ জন কোন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়।

১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা চূড়ান্ত রূপ পায়নি। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক মমিনউল্লাহ পাটোয়ারীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রথমবারের মতো একটি তালিকা করে। ওই তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদে লাল বই নামে সংরক্ষিত রয়েছে। ওই তালিকায় ১ লাখ ৫৪ হাজার জনের নাম থাকলেও সবার নামে গেজেট ছিল না।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে দায়িত্ব না দিয়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব সা’দত হুসাইনের নেতৃত্বে চারজন সচিব ও খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি করে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০০২ সালের ৪ মার্চ সশস্ত্র বাহিনীর ৩৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নামে বিশেষ গেজেট এবং ১ লাখ ৫৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়। বিএনপি সরকার নতুন করে আরও ৪৪ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে মোট ১ লাখ ৯৮ হাজার জনের নামে গেজেট প্রকাশ করে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ৭২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে অভিযোগ তোলেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম। ২০০৯ সালের ১৩ মে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সূত্র: দৈনিক বাংলা

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও