ছয় বছর ধরে তালাবদ্ধ ঝালকাঠি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি
ডিসেম্বর ১৩ ২০২২, ১৭:৪৬
ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ছয় বছর আগে উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে এ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের সভা-সেমিনার করতে হচ্ছে রেস্তোরাঁ বা ভাড়া করা কমিউনিটি সেন্টারে। দোকান বরাদ্দের জামানতের টাকা নিয়ে ভাড়াটের মামলা–জটিলতায় ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের ব্যবহারবিধি ও সরকারের পরিকল্পনাসংক্রান্ত পরিপত্র থেকে জানা যায়, ভবনের ভাড়া বাবদ উপার্জিত অর্থ স্থানীয় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রচার-প্রচারণা ও বিভিন্ন দিবস পালনের খাতে ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া ওই ভাড়া থেকে ভবন রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মচারীদের বেতন ও ভবনের উন্নয়নের জন্য সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু ছয় বছর ভবনটি তালাবদ্ধ থাকায় আয়ের পথ বন্ধ আছে।
ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজের বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ। শহরের প্রবেশদ্বার গুরুধাম সেতুর ঢালে প্রায় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মিত হয়। ২০১৬ সালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
নতুন ভবনে দোকান বরাদ্দের দাবি করে আদালতে করা মামলার বাদী শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার বাসিন্দা সামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের পুরোনো ভবনের ভাড়াটে ছিলেন। ২০১২ সালের চুক্তিপত্র অনুযায়ী তাঁর আগের জামানতের ২ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে নতুন কমপ্লেক্স ভবনের দ্বিতীয় তলা ভাড়া দেওয়ার নোটিশ টাঙানো হয়। নতুন ভাড়াটের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নেওয়া হয়েছে। এ জন্য মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন। আদালত এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি তালাবদ্ধ। ভবনের পলেস্তারা ও রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফটক ও জানালার গ্রিলে মরিচা ধরেছে।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমিন বলেন, জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কমপ্লেক্সটি সরকার তৈরি করলেও তা কাজে আসছে না। মামলার জটিলতার কারণে ভবনটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় নিষেধাজ্ঞার কারণে ভবনে দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা বলেন, ভবনটি এভাবে বন্ধ থাকলে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। সামান্য দুই লাখ টাকার জামানতের জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এটি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে না। শিগগিরই আদালতে এ নিষেধাজ্ঞা বাতিলের আবেদন করা হবে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, বর্তমানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমিটি নেই। ভবনটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে। আদালতের অনুমতি পেলে ভবনটি মেরামত ও সংস্কারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি নিয়ে মামলা আছে। ডিসেম্বর মাসে দেওয়ানি আদালত বন্ধ। জানুয়ারিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।








































