বরগুনায় সাংবাদিক মাসউদ হত্যার অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মার্চ ০৪ ২০২৪, ১৮:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি তালুকদার মাসউদকে বরগুনা প্রেসক্লাবে আটকে রেখে নির্যাতনের পর মৃত্যুর অভিযোগে ১৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।

সোমবার বেলা ৩টার দিকে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বরগুনা সদর থানায় মামলাটি করেন। এ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাশেম মো: মিজানুর রহমান। মামলার আসামিরা হলেন আ স ম হাফিজ আল আসাদ (সোহেল হাফিজ), আরিফুল ইসলাম মুরাদ (২৮), মো: কাসেম হাওলাদার (৩০), ফেরদৌস খান ইমন (৪০), মো: সাইফুল ইসলাম মিরাজ (৩০), মো: ছগির হোসেন টিটু (২৮), আ: মালেক মিঠু (২৮), ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম মেহেদী (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫), এ এস এম সিফাত (২৭), শহিদুল ইসলাম শহিদ (৪৫), ও মো: জাফর হোসেন হাওলাদার।

এদের মধ্যে আ স ম হাফিজ আল আসাদ (সোহেল হাফিজ) এনটিভি, ফেরদৌস খান ইমন যমুনা টিভি, আ: মালেক মিঠু ডিবিসি নিউজ, মো: সাইফুল ইসলাম মিরাজ সময় টেলিভিশন ও মো: জাফর হোসেন হাওলাদার মোহনা টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ড গোরাপদ্মা এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) আবদুল ওয়াহাব মাস্টারের ছেলে। তিনি দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকা ও রাজধানী টেলিভিশন নামের একটি আইপি টিভির বরগুনা জেলা প্রতিনিধি। এছাড়াও তিনি ওই এলাকার ইউপি সদস্য ছিলেন। তার স্ত্রী সাজেদা একজন স্কুলশিক্ষক।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, তালুকদার মাসউদ ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। সে সুবাদে তিনি বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ‘বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন করেন। এতে বরগুনা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বস্থানীয় কিছু সদস্য তালুকদার মাসউদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য মুশফিক আরিফের সাথে বরগুনা প্রেসক্লাবে গিয়ে ক্যারাম খেলা শুরু করেন তালুকদার মাসউদ। প্রেসক্লাবে ক্যারাম খেলতে দেখে এনটিভির বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ তালুকদার মাসউদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালি-গালাজ শুরু করেন।

এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কের এক পর্যায়ে সোহেল হাফিজসহ অন্য আসামিরা প্রেসক্লাবের গেট বন্ধ করে মাসউদের ওপর হামলা চালায়। এসময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আসামিরা গেট তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় এক ঘণ্টা প্রেসক্লাবে আটক থাকার পর বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত বশির আলম প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাপসাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনার ১১ দিন পর শনিবার (২ মার্চ) রাত ১১ টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বলেন, ‘জেলা প্রেসক্লাব গঠনের পর থেকেই বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ ও তার অনুসারী কিছু সাংবাদিক আমার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। জেলা প্রেসক্লাব বন্ধ করতে বেশ কয়েকবার সোহেল হাফিজ আমার স্বামীকে হুমকি-ধামকিও দিয়েছেন।

এর রেষেই ঘটনার দিন আসামি সোহেল হাফিজসহ অন্যরা আমার স্বামীকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার একমাত্র মেয়ে এখনো পড়াশোনা করে, ছেলের বয়স মাত্র ১৩ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমি এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার চাই।’

বরগুনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাশেম মো: মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। তার স্ত্রী সাজেদা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আমরা আসামিদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছি।’

 

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও