হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় দরিদ্ররা: খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা
জানুয়ারি ০৮ ২০২৩, ১১:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: কনকনে শীতের সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শীত জেঁকে বসেছে রাজধানী ঢাকাতেও। রাতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে কুয়াশাবৃষ্টি। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও সূর্যের দেখা মিলছে না।
সবচেয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে দরিদ্র-অসহায় মানুষ। শীতে জবুথবু হয়ে শহরের মোড়ে মোড়ে, অলিগলিতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা।
হাড় কাঁপানো শীতে সীমাহীন কষ্টই এসব মানুষের নিত্যসঙ্গী। অবস্থা এতটাই বেগতিক, খাবারের চেয়ে শীতের কষ্ট নিবারণই তাদের কাছে এক যুদ্ধ।
প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় বিকল্প উপায়েই রাতের কষ্ট লাঘব করতে হচ্ছে তাদের। শনিবার দুপুর গড়ালেও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগুন পোহাচ্ছিলেন হামিদা বেগম (৬০)। তিন সপ্তাহ আগে তার স্বামী মারা গেছে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা গেছে ৩৩ বছর আগে জীবিকার খোঁজে ঢাকায় আসা এ নারী অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘রাস্তায় ঘুমাই, রাস্তায় থাহি। টিএসসির ভেতরে ঘুমাইতে গেলে
দারোয়ান বাইর কইরা দেয়। কয় বাইরে গিয়া ঘুমান। ঢাকা শহরে আইচি আমি বত্তিশ-তেত্রিশ বছর, কুনোদিন একটা ত্যানা পর্যন্ত পাইছি না।’
আগুন পোহাতে পোহাতেই বার্ধক্যে পড়া এই নারী বলেন, ‘বিশ দিন আগে আমার স্বামী মইরা গেছে। টেকার অভাবে আমি তারে ভালা কইরা ওষুধ খাওয়াইতেও পারি নাই।’
পরিবারের কথা বলতে বলতেই কেঁদে ওঠেন, ‘এক ছেলে মারা গেছে করোনার ভেতরে। ছোট একটা ছেলে আছে, তাকেও ঠিকমতো শীতের কাপড় দিতে পারি নাই। কী যে কষ্টে আছি আমরা, বুঝাইতে পারুম না।’
শনিবার সকালে রাজধানীতে এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চলতি মৌসুমে ঢাকাতে এটিই সর্বনিম্ন তাপমাত্রাই বলে জানায় আবহাওয়া অধিদঢতর। তখন সকাল ৮টা। দূরের কাউকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না।
আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের ঠিক সামনেই কথা হয় রিকশাচালক আকতার হোসেনের সঙ্গে। রঙচটা পাতলা সোয়েটার আর মাথায় গামছা পেঁচিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কখন কেউ এসে বলবে, ‘এই মামা যাবেন’? এই রিকশাচালক বলেন, ‘আমগোর কষ্ট সবসময়ই। গরমেও কষ্ট, শীতেও কষ্ট।
শীতের বেলায় আমগোর বেশি কষ্ট হয়। কারণ দুপুর না হইলে ভাড়া পাই না তেমন। ঘরের তোন মানুষই বাইরোয় না, কেমনে ভাড়া পামু কন।’ তিনি বলেন, ‘গতবছর শীতের সময় দুইডা কম্বল পাইছিলাম। এইবার তো কেউ কিছুই দিল না।’
পলাশী মোড়ে চায়ের দোকানে আঁটোসাঁটো হয়ে গল্প করছিলেন তিনজন। তাদের একজন ডেকোরেটর শ্রমিক রুহুজ্জেল মিয়া বলেন, ‘শইলডা শীতে কিছু মনে করে না। আগে শীতে কষ্ট পাইতাম। এহন সব সইছে। কেডা কী দিব, এইসবের আশায় থাইকা লাভ নাই। নুন পানি যা পামু খামু।’
হিমাচল পরিবহনের হেলপার নজরুলের মতে, শীতে মরণ শুধু গরিবের। ভোর ৪টায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন তিনি। মানুষজনও কম, ভাড়াও তেমন আসে না। তবুও শিডিউল মেনে তাকে বের হতে হয়েছে সাতসকালেই।
ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে শীতের রাতে চাদর গায়ে জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন বৃদ্ধ জলিল। পাতলা চাদরে ময়লা লেপ্টে ভারী হয়ে শীতের কষ্ট কমাচ্ছে।
তার ভাষ্য, ‘শীতের সময় শীত না লাগলে কি আর চলব- কষ্ট হয়। কষ্ট কইরাই তো বাঁচন লাগে। যাগোর দশ তলা বাড়ি আছে হেরা যেমনে শুইয়া থাহে আমরা কি সেরকম পারুম? মোটা কম্বল দিয়া কী করুম। আইজগ্যা রাতে তো ভাতই খাইতে পারি নাই!
’









































