প্রত্যন্ত এলাকায় ধরা পড়ছে বিষাক্ত সাকার ফিস, উদ্বেগ সচেতন মহলে
এপ্রিল ০৩ ২০২৩, ১২:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত এলাকায় জাল ফেললেই ধরা পড়ছে বিষাক্ত সাকার ফিস। দিন দিন এর প্রজনন বেড়েই চলছে। সাকার ফিসের মূল খাবার মাছের পোনা ও পোকামাকড়।
এতে নষ্ট হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন। এ নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে মৎস্য খামারি ও সচেতন মহলে। উদ্বেগ রয়েছে সরকারি পর্যায়েও।
তথ্যানুসন্ধানে জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাকার ফিসের আসল নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকাসটোমাস। আশির দশকে অ্যাকোয়ারিয়ামের শেওলা ও ময়লা পরিষ্কার করতে এই মাছ বিদেশ থেকে আনা হয়।
এই মাছ দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। তবে কয়েক বছর ধরে তা ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে। সাকার মাছের পিঠের ওপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে।
দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের দুটি পাখনা। এর দাঁতও বেশ ধারালো। সাধারণত জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ এদের প্রধান খাবার।
যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, সেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না, তবে এই মাছ জীবন ধারণ করতে পারে। পানি ছাড়াও মাছটি ২৪ ঘণ্টা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
সাকার মাছ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বা খারাপ পানিতে এবং কম অক্সিজেনেও বাঁচতে পারে। পাশাপাশি এটি দ্রুত প্রজনন ঘটায়। মাছটি বিষাক্ত বিধায় খাদ্যাভ্যাসে মাছের তালিকায় না থাকায় দিন দিন প্রজনন বেড়েই চলছে।
এই মাছ যদি দেশের মানুষ খেত, তাহলে এত বাড়ত না। এভাবে যদি বাড়তে থাকে তাহলে অন্যান্য মাছের সঙ্গে সাকার মাছের জায়গা নিয়ে, খাবার নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এ জন্য সাকার মাছ কমাতে হবে।
মৎস্যবিদ রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘সাকার মাছ এখন জীব-বৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। সাকার অন্যান্য মাছের লার্ভা ও ডিম খেয়ে ফেলে। এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশীয় মাছ টিকে থাকতে পারছে না।
সাকার মাছ ধীরে ধীরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘যারা অ্যাকোয়ারিয়ামের ব্যবসা করেন, তাঁরাই বিদেশ থেকে দেশে সাকার মাছ আনেন। অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচের সঙ্গে লেগে থাকা ময়লা সাকার মাছ খেয়ে ফেলে।
এতে কাচ পরিষ্কার থাকে। এ কারণেই তাঁরা এ মাছ আনেন। কিন্তু এটা কোনো না কোনোভাবে আমাদের প্রকৃতিতে চলে গেছে।’ মৎস্যবিদ আরো বলেন, ‘সারা দেশ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিন-চার জায়গার নমুনা নাকি সারা দেশেই সাকার মাছের মধ্যে ভারী পদার্থ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যদি গবেষণায় দেখা যায়, অন্যান্য জায়গার সাকার মাছে ভারী পদার্থ নেই, তাহলে এই মাছ মানুষের খেতে সমস্যা থাকবে না।’ অপরদিকে ভারী পদার্থ না থাকলে সাকার মাছ দিয়ে মাছ ও হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে।
তবে যেহেতু এটা বাড়ছে বেশি, সে জন্য যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরে মেরে ফেলতে হবে।’ পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পুকুর বা মাছের ঘেল প্রস্তুতের সময় তা শুকিয়ে সব সাকার ধরে মেরে ফেলতে হবে।
বন্যা বেশি হওয়ায় পুকুরের চারপাশে জাল দিয়ে রাখতে হবে যাতে সাকার পুকুরে প্রবেশ করতে ও বের হতে না পারে। তবে পুকুর থেকে সরালেও নদ-নদী ও খাল-বিল থেকে এ মাছ সরানো কঠিন হবে।
সে ক্ষেত্রে সরকার ঘোষণা দিতে পারে, সাকার ধরে দিলে প্রতিটিতে ১০ টাকা করে দেওয়া হবে। তাহলে হয়তো এটা নির্মূল করা সম্ভব হবে।’









































