পটুয়াখালীতে সালিসের নামে ৫ তরুনের মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ
অক্টোবর ২৭ ২০২৫, ১৮:০০
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে শুক্রবার দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতি হয়। এ সময় বাবার সঙ্গে মিলে মনিরকে লাঞ্ছিত করেন মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ানও। এরই জের ধরে শনিবার রাতে মনির গোলদারের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ান তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে রাব্বি রিয়ানকে মারধর করে।
পরে রিয়ানকে মারধরের ঘটনাটি তার বাবা মোজাম্মেল স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফাকে জানান। পরদিন সকালে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতে মধ্য চতলাখালীর খুতির বাজার এলাকায় শালিস বসে। সেখানে দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে তিনি ঘটনার সাথে জড়িত ৫ তরুণকে বখাটে আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন। একপর্যায় নিজেই উপস্থিত নর সুন্দর ডেকে এনে তাদের থেকে মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায় লাঠি হাতে রেশাদ খলিফা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আর এক নরসুন্দর তাদের মাথা ন্যাড়া করছেন। তবে রেশাদ খলিফা প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইনি ওই এলাকার বাসিন্দারা।
মাথ্যা ন্যাড়া করে দেওয়া ভুক্তভোগী নয়ন সরদার বলেন, ‘আমি তো কোন অপরাধ করিনি। রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি ছাড়িয়ে দিয়েছি। তারপরও মেম্বার ফোন করে আমাকে ডেকে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিছে।’
নয়ন সরদারের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের কাছে এ সমস্ত ঘটনা শুনে গেছি। আমি অভিভাবক, আমিতো আছি। আমার ছেলে কোন অপরাধ করলে আমাকে ডাকতো। সেতো কোন অপরাধ করেনি। মারামারি দেখে থামিয়েছে। কিন্তু গিয়ে মেম্বার বিনা অপরাধে আমার ছেলের মাথা কামিয়েছেন ‘
অপর ভূক্তভোগী রাব্বি বলেন, ‘রিয়ান ভাইর সঙ্গে আমার মারামারি হয়েছে। স্থানীয় রেশাদ মেম্বার (ইউপি সদস্য) এসে চৌরাস্তায় (খুতির বাজার) সালিশ করে দিছে। ওর (রিয়ান) এবং আমারসহ ৫ চুল কেটে দিছে। ওরা (তিনজন) মারেনি, ওদেরও চুল কেটে দিছে।’
রাব্বির মা মাহফুজা বলেন, ‘জমিজমা ঝামেলা নিয়ে রাব্বির বাবাকে মারধর করেছে রিয়ান ও তার বাবা। এটা কোন ছেলে মেনে নিতে পারে? তাই রিয়ানকে এই কথা জিজ্ঞস করতে গিয়ে মারামারি হয়েছে। সেটা নিয়ে রেশাদ মেম্বার সবার চুল কেটে দিছে।’
রিয়ানের বাবা মোজাম্মেল মৃধা বলেন, ‘রাব্বির বাবা মনিরের সঙ্গে আমার যে সমস্যা হয়েছিল, তা মিটমাট হয়ে গেছে। তারপর মনিরের ছেলে এসে আমার ছেলেকে মারধর করছে। আমার ছেলেকে চার-পাঁচজনে মিলে মারছে। আমি মেম্বারের কাছে বিচার চাইছি। মেম্বার এসে বিচার করে দিছে। মাফ চাওয়াইছে। আর আমার ছেলেসহ সবার চুল কেটে দিছে।’
এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার মুডোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। গ্রাম আদালতের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম হোসেন সায়েম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের বাহিরে সালিশ করার সুযোগ নেই। আর সালিশের নামে যে ঘটনাটি শুনেছি, সেটি সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত কাজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির এমন ক্ষমতা নেই।’
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এবং ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’









































