জোয়ার-ভাটার নিয়মে চলে মহিষ বাথান
অক্টোবর ০৩ ২০২৫, ২১:৩২
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চরমন্তাজ, টুঙচর ও চরফারুকির মতো বেশ কয়েকটি চরের বাথানে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-মহিষ চরে বেড়ায়। সাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনার বিস্তীর্ণ চরে (তৃণভূমি) মানুষ ও পশুর জীবন পুরোপুরি নির্ভরশীল নদীর জোয়ার-ভাটার ওপর। জোয়ার-ভাটার নিয়মে বাথানে গরু-মহিষদের বিচরণ করতে হয়। দিন-রাতের বিচারে নয়, নদীর জোয়ার-ভাটার নিয়মে গরু-মহিষ ও মানুষের জীবন পরিচালিত হয়।
ঢালচরের মহিষের রাখাল (রাখফাল) মিজানুর রহমান জানান, দিন-রাতের নিয়মে গরু-মহিষ বিচরণ করে না। রাখালদেরও দিন-রাত নেই। চরের মানুষ ও পশুদের সবটাই চলে জোয়ার-ভাটার নিয়মে। জোয়ারের সময় গরু-মহিষ কিল্লায় ওঠে, আর ভাটার সময় কিল্লা থেকে বের হয়। বিশাল চরের তৃণভূমিতে তারা ঘাস খায়। পাতিলার চর এলাকার বাসিন্দা বাবুল জানান, চরে প্রায়ই ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ার আঘাত হানে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় তেঁতুলিয়া ও মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। চরাঞ্চলের বড় শত্রু হলো ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার। বর্ষা মৌসুমেও চরের তৃণভূমি প্লাবিত হয়। তখন মহিষ পানিতে ভেসে যায়।
চরাঞ্চলে বাঁশ-কাঠ, টিন, পলিথিন ও অন্য সব সামগ্রী দিয়ে অস্থায়ী আবাস ‘কিল্লা’ বানানো হয়। প্রতিকূল পরিবেশে এখানে মহিষ আশ্রয় নেয়। আর বিস্তীর্ণ চরের তৃণভূমিতে ‘বাথানে’ পশু বিচরণ করে ও খাবার খায়। চরের প্রাণিদের জীবন অনেকটা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এখানকার রাখালদের জীবন বেদুইনদের মতো। মহিষের পিঠে চড়ে তারা ঘুরে বেড়ায়। বাঁশি বাজায়, গান গায়।
রাখালরা জানায়, একেকজন রাখাল প্রায় ৫০টি গরু-মহিষের দায়িত্বে থাকে। চরাঞ্চলে গাছপালা, ছাউনি না থাকায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যাযাবরের মতো তারা জীবনযাপন করে। গরু-মহিষের সঙ্গে তাদের রাত-দিন কাটে। রোগ-শোকের মধ্যেও তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। রাতে নৌকার ছাউনির মতো ছোট ছাউনিতে তারা অবস্থান করে। একেকটি বাথানের জন্য একেকটি ছাউনি থাকে। শিয়ালের উপদ্রব দেখা দিলে সারা রাত জেগে পাহারা দিতে হয়।
রাখালরা জানান, বাথানে হাজার হাজার গরু-মহিষ থাকলেও চিনতে অসুবিধা হয় না। সবাই সবার পশু চেনে। শুধু চোরের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। চরে রাখাল কিংবা গবাদিপশুর চিকিৎসক, প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি সংশ্লিষ্টদের আহ্বান-সুলভ মূল্যে পশু চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হোক, রাখালদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হোক।









































