সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে কোরআন তেলাওয়াত করেন যে সাহাবি
নভেম্বর ১৩ ২০২২, ১৭:০৬
ধর্ম ডেস্ক :: নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়েছিল পবিত্র ভূমি মক্কার হেরা গুহায়। কোরআন নাজিলের প্রথম প্রহরে আল্লাহর রাসুলকে যখন কিছুটা ভয়, আশঙ্কা, বিপন্নবোধ ঘিরে ধরেছিল, এসময় তাকে অভয় দিয়েছিলেন উম্মাহাতুল মুমিনীন খাদিজা রা.। ইসলাম ও আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিতেই কোনও বাক্য বিনিময় ছাড়াই রাসুলের কথা বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন হজরত আবু বকর রা.। এরপর একে একে ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন আরও অনেকে।
কোরআন নাজিলের প্রথম দিনগুলোতে কুরাইশারা লিপ্ত ছিল আল্লাহর অবাধ্যতায়, হেন অবরাধ ছিল না যা তারা করতো না। মক্কার এমন ইসলাম বিরোধী ও বৈরি পরিবেশে আল্লাহর একত্ববাদের বাণী প্রচার করতে গিয়ে কাফের-মুশরিকদের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল আল্লাহর রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামকে। সাহাবিদের নিয়ে গোপনে কোরআনের বাণী, আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান সম্পর্কে জানাতেন আল্লাহর রাসুল। প্রকাশ্যে কোরআন তেলাওয়াতের বিষয়টি ভাবাও যেত না তখন।
এমন সময়ে কুরায়শদের একেবারে নাকের ডোগায় গিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে কোরআন তেলাওয়াকারী সাহাবি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। কুরায়শ নেতাদের হতবাক করে সবার সামনে বায়তুল্লাহ শরিফে তিনি সুরা আর রহমানের কিছু অংশ তিলাওয়াত করেন।
প্রকাশ্যে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য অনেক বড় মাশুল দিতে হয়েছিল তাকে। কাবার সামনে জনসম্মুখে কোরআন তেলাওয়াত করার পরই তার ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। একারণে কুরাইশরা তাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে। জ্ঞান ফেরার পর যখন সবাই বলাবলি করলেন— তোমাকে এজন্য না যেতে বলেছি, তিনি জবাব দিয়েছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি আবারও যাব এবং তাদের সামনে কোরআন পাঠ করব। -(উসদুল গাবাহ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা ৩৮২)
ইতিহাসের বর্ণনামতে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হিজরতের ৩৭ বছর আগে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম আবির্ভাবের প্রাথমিক যুগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বলা হয়, তিনি ইসলাম গ্রহণকারী ষষ্ঠ ব্যক্তি। ইসলামের জন্য দুইবার হিজরত করেন মহান এই সাহাবি এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বদর, উহুদ, খন্দক, বাইআতে রিদওয়ানসহ অন্যান্য যুদ্ধাভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রাথমিক জীবনে মেষ চড়াতেন এবং টাকা রোজগার করে তার জীবন চালাতেন। তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি অনেক প্রমকপ্রদ। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আবু বকর (রা.) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এমন কোনো মেষ আছে কি-না যা দুধ দেয়। মাসউদ (রা.) বললেন, এই মেষ তার না তাই তিনি দিতে পারবেন না। কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে এমন একটি মেষ দেখিয়ে দাও যে আর দুধ দেয় না।
তিনি রাসুলুল্লাহকে (সা.) দেখিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মেষের ওলানে হাত রেখে দোয়া করলেন এবং তা দুধ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। এসব কিছু মাসউদের (রা.) সামনেই ঘটেছিল। তারপর তারা তিনজন দুধ পান করলেন।
তাৎক্ষণিক আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন, আপনি মুখে কী বলেছেন আমাকে শিখিয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বিচক্ষণ বালক বলে অবহিত করেন এবং তিনি যে দোয়া করছিলেন তা বুঝালেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন কোরআনের একনিষ্ঠ সেবক। তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কোরআন অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার কাজে ব্যয় করেন। সমকালে তাঁকে কোরআনের একজন শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার গণ্য করা হতো।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর তিলাওয়াতের প্রশংসা করতেন। একবার আল্লাহর রাসুল বলেন, ‘যে কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছে ঠিক তেমন ও সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করে খুশি হতে চায়, সে যেন ইবনে উম্মে আবদ (অবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ)-এর মতো তিলাওয়াত করে। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৩৪০) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কাছ থেকে কোরআন শেখার নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৭১৩)
হজরত ওমর (রা.) তাঁকে কুফায় শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর ব্যাপারে লেখেন, আবদুল্লাহর ব্যাপারে তোমাদেরকে আমি নিজের ওপর অগ্রাধিকার দিলাম। ফকিহুল উম্মাহ খ্যাত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
আমার বরিশাল/ আরএইচ









































