বরগুনায় মকবুলকে কুপিয়ে জখম ॥ অর্ধমাসেও আটক হয়নি কেউ
নভেম্বর ০৭ ২০২২, ১৯:২৫
রিপন মালী, বরগুনা ॥ বরগুনা সদর উপজেলার ২নং গৌরিচন্না ইউনিয়নে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেড়ে প্রতিপক্ষের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন গুরুতর জখম হয়। এই ঘটনায় থানায় মামলার ১৫ দিন অতিক্রম হলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করেতে পারেনি পুলিশ।
২২ অক্টোবর (শনিবার) রোডপাড়া গ্রামের জনৈক মন্টু মোল্লার বাড়ির দক্ষিন পার্শ্বে পাকা রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত মকবুল একই এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে। এ ঘটনায় মকবুলের স্ত্রী শিল্পী বেগমও গুরুত্ব আহত হয়। এই ঘটনায় মকবুলের বাবা আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নং ২৮/৩৪১।
মামলা সূত্রে জানা যায, মকবুলের বাড়ির সামনে অভিযুক্ত মৃত শফিজ উদ্দিনের ছেলে আলিম ওরফে রিপন, ও জলিল ওরফে স্বপন, আব্দুল সোবাহানের ছেলে গোলাম কিবরিয়াসহ ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল লাঠি ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে জমির মালিক একই এলাকার ইউপি সদস্য হিরন মিয়ার জমিতে রোপনকৃত ধানের বীজ উপড়ে ফেলে।
এ সময় সংবাদ পেয়ে একই এলাকার হিরন মেম্বার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ইব্রাহীমকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের বাধা নিষেধ করলে! অভিযুক্তরা বাধা না শুনে অযথা তর্ক বিতর্ক করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তর্ক বিতর্কের একপর্যায়ে হিরন মেম্বারের উপর চড়াও হয় অভিযুক্তরা।
সেই সময় অবস্থার বেগতিক দেখে একই এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে মকবুল হোসেন উভয়পক্ষকে শান্ত হতে বলেন এবং রিপনকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলে। এতে রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে তার (রিপনের) সাথে থাকা মেরে পূর্ব ব্যাগে থাকা দেশীয় ধারালো অস্ত্র চাকু দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ভুক্তভূগী মকবুলের শরীরে এলোপাতাড়িভাবে কোপ দিতে থাকে। এতে মকবুলের পেটে নাভীর নিচে এক তৃতীয়াংশ কেটে ভুড়ি বেড়িয়ে যায়।
এরপর অভিযুক্ত স্বপন এসে হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র ছেনা দিয়ে মকবুলের মাথায় আঘাতের চেষ্টা করে। তখন মকবুল ডান হাত দিয়ে কোপ ফিরানোর সময় তার কব্জিতে কোপ লাগে। এরপর সোবাহানের ছেলে গোলাম কিবরিয়া এসে হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে মকবুলের মাথা উদ্দেশ্য করে কোপ দেয়। কোপটি ফিরানোর সময় মকবুলের ডান হাতের বাহুতে লাগে। পরবর্তিতে স্বপন আবারো মকবুলের মাথা লক্ষ করে কোপ দিলে মকবুল তার বাম হাত দিয়ে ফেরালে তার বাম হাতের কব্জিতে লাগে। পরে সকল অভিযুক্তরা গুরুতর আহত মকবুল কে খালের ভিতর ফেলে দেয়।
এসময় নিজেকে বাচানোর জন্য গুরুতর আহত মকবুল জোরে ডাক চিৎকার দিলে মকবুলের স্ত্রী শিল্পী বেগম শুনে ছুটে আসলে সকল অভিযুক্তরা শিল্পী বেগমের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে ও কাপড় টেনে খুলে ফেলে শ্লীলতাহানী করে। স্থানীয়রা দ্রুত মকবুলকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মকবুলের গুরুত্ব থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
প্রসঙ্গত, গৌরিচন্না ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হিরন। তিনি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমির কয়েকটি গাছ কেটে এলাকার একটি মাদ্রাসায় দান করেছে। এসব গাছ নিজের দাবি করে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানি করে আসছেন অভিযুক্ত স্বপন। স্বপনের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, জলিল মিয়া স্বপনের বাবা সফিজ উদ্দিনের ভোগ করা জমিতে মেহগনি, চাম্বলসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ রোপন করে ভোগ দখল করে আসছে স্বপন।
এসব গাছ একই ইউনিয়নের রোডপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদ এবং হামিদের ছেলে মকবুল, সোহেল ও রফিজ উদ্দিনের ছেলে পনু মিয়া কেটে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মুল্য ৯০ হাজার টাকা৷ এসময় পিলার ভাঙাসহ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। তবে এসব অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ মামলার বাদী এবং বিবাদীরা আত্মীয় স্বজন। মামলায় বাদী যে যেসব অভিযোগ এনেছে তার কোন সত্যতা মেলেনি। এছাড়াও খুন, জখম ও মারধরের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম হিরণ মিয়া জানান, মকবুলের চিকিৎসা চলছে। খুব আশঙ্কা জনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। মকবুলের বাবা আব্দুল হামিদ জানান, শফিজের পুত্র রিপন ও স্বপন এবং গোলাম কিবরিয়া সহ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়।
আমরা এদের বিচারের দাবি জানাই। তিনি আরো বলেন, প্রতিপক্ষ স্বপন ও রিপন বিভিন্ন সময় আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে একের পর এক হয়রানি করে আসছে আমরা এ মিথ্যা মামলার ও বিচারের দাবি জানাই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার এস আই আল মোমেন বলেন, মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তদন্ত কার্যক্রম চলছে ও বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আসামিদের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চলছে।